৩৪ বছর পর বসতভিটা ফিরে পেলেন মার্ডি প্রশাসনকে গণমানুষ এভাবেই পেতে চায়

আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৩, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

রাজশাহী জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বসতভিটা ফিরে পেলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির এক পরিবার। গোদাগাড়ী উপজেলার ভোলা মার্ডি রিশিকুল ইউনিয়নের বামলাহাল মৌজার ৯০১ দাগের ৩৪ শতক খাস জমি ১৯৮৯-৯০ সালে বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু মার্ডি ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সারোয়ার জাহান ডাবলু স্থানীয় শাজাহানের সহযোগিতায় জায়গাটি জবর দখল করে রেখেছিলেন। এরপর তিন সপ্তাহ আগে হঠাৎ ওই পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। জনাব মার্ডি কোনো উপায় না পেয়ে ১৯ জানুয়ারি সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরের দিন ২০ জানুয়ারি সকালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সবুজ হাসান অভিযান পরিচালনা করে নির্মাণাধীন অবৈধ স্থাপনাটি অপসারণ করেন এবং ওই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির পরিবারকে জমিটি ফিরিয়ে দেন।
এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। নিশ্চয় খবরটি যে বা যারাই পাঠ করেছেন তাদের কাছে খবরটি ভাললাগার ছিল। সাধারণতঃ এমন ভাললাগার মত. আশ্বস্ত হওয়ার মত সংবাদ কমই শোনা যায়। উল্লিখিত ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর তাৎক্ষণিকতা। সরকারের একটি দপ্তর দুর্বল মানুষের সহায় হয়ে ত্বরিতগতিতে ব্যবস্থা নিতে পারেÑএটা একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনাও। দৃষ্টান্তমূলক হলেও প্রশাসনের কাছ থেকে সেবা পাওয়াটা অধিকার, গণমানুষের কাক্সিক্ষত বাসনা। সচারচর এতো দ্রুততার সাথে সমস্যার সমাধান- তাও একজন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির পরিবারের সেবার উদাহরণ সচারচর দেখা যায় না। রাজশাহী জেলার মাননীয় জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সেই কাজটিই করে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিরা মানবিক হবেন এবং তাদের সেবাব্রত মানুষের কল্যাণে নিবেদন করবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে তো সেই অর্থেই দীপ্যমান। এই দীপ্যমানতার মধ্যেই তো জনগণতন্ত্রের মূলমন্ত্র নিহিত আছে।
প্রশ্ন করতেই হয়- ভোলা মার্ডির ঘটনা জেলা প্রশাসক পর্যন্ত গড়ালো কেন? উপজেলা প্রশাসনই তো বিষয়টির নিষ্পত্তি দিতে পারতো। কিন্তু সেটা হয় না কেন? যেটা হওয়ার প্রয়োজন ছিল সেই প্রতিশ্রুতিই তো এখনো বহাল আছে। সীমাবদ্ধতার প্রশ্নটি চলে আসে। কিন্তু এটিও তো ঠিক ৫১ বছর পরেও কেন ভোলা মার্ডিদের সমস্যা সমাধানে সীমাবদ্ধতার প্রশ্নটি থাকবে কেন!
সদিচ্ছা থাকলে যে সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করেও মানুষের জন্য কাজ করা যায় জেলা প্রশাসক সেটাই প্রমাণ করলেন। জনআকাক্সক্ষার এই চিরন্তন আবেদনে সাড়া দেয়ার মনমানসিকতা গড়ে তোলার সংস্কৃতি সরকারি কর্মচারিদের গড়ে তোলার সময় এসেছে। মাননীয় জেলা প্রশাসক তেমনই তাগিদ দিয়েছেন দায়ত্বশীলদেও প্রতি। যখন আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে টেকসই উন্নয়নের ভাবনাকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর তখন কোনো অবস্থাতেই মানুষের প্রতি নিপীড়নের সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দিতে পারি না।
ধন্যবাদ মাননীয় জেলা প্রশাসক আপনাকে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ