৩৪.২ শতাংশ কিশোরী যৌন নির্যাতনের শিকার || পরিবার থেকেই জাগরণটা তৈরি করতে হবে

আপডেট: মার্চ ১, ২০১৭, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ

২০১৫ সালে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি শতকরা ৩৪ দশমিক ২ ভাগ কিশোরী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ। সোমবার বিকেলে সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত নারী সদস্য দিলারা বেগমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী ‘বিবিএস পরিচালিত “ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন সার্ভে-২০১৫” এর তথ্য উদ্ধৃতি করে বলেন, শতকরা ৩০ দশমিক ৯ ভাগ কিশোরী জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক নির্যাতন এবং ১০ হতে ১৪ বছর বয়সি শতকরা ৩৪ দশমিক ২ ভাগ কিশোরী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।’
এ তথ্য সরকারি একটি সংস্থার। এটাকেই গ্রহণযোগ্য ধরে নিলেও তথ্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক, উৎকণ্ঠার। কেননা তথ্যই বলে দেয় যে, নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা কমছে না। অব্যাহতভাবে তা বাড়তেই আছে।
বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগুচ্ছে। আর্থ- সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রশংসা কুড়াচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রেই বড়ই বিমানান পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি করেছে। কিন্তু নারীরর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সক্ষম হলে বর্তমানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গ্রাফটা যে আরো উপরে থাকতো তা বলাই বাহুল্য।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার বেশকিছু গৃহীত পদক্ষেপ নিয়েছে।  ‘দেশব্যাপী নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের সেবা প্রাপ্তির সুবিধার্থে দেশের ৪০টি জেলা সদর হাসপাতালে এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল স্থাপন করা হয়েছে।’
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে স্মার্ট ফোনে ব্যবহার যোগ্য মোবাইল অ্যাপস ‘জয়’ তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু কিংবা তাদের পরিবার ১০৯২১ এ তাৎক্ষণিকভাবে এসএমএস প্রেরণ করতে পারে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ মোটেও যথেষ্ট নয়। নারী নির্যাতনের পেছনে সামাজিক. সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক যে কারণসমূহ আছে সেগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এসব কারণের সবকটিই পরিবার থেকে উদ্ভুত হয়। কন্যাশিশুরা বলা যায় অধিকাংশ পরিবারেই মাতৃগর্ভে থাকতেই বৈষম্য ও অবহেলার শিকার হয়। এই অবহেলা ও বৈষম্য পরিবার ও সমাজে এক ধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি করেছে। অর্থাৎ কন্যাশিশু বা নারীর প্রতি বৈষম্যটা করাই যায়! এমন ধারণাতেই বিশ্বাস রাখে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তাই পরিবার থেকেই জাগরণটা তৈরি করতে হবে যে, উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রেই নারী সমানভাবে উপযোগী ও সক্ষম।
সময় এসেছে আমাদের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিম-লে নারীর প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান তা পাল্টাতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি দরকার, গবেষণা দরকার, বিনিয়োগ দরকার।