৩৭ বছরেও বিএমডিএ’র জনবল অবকাঠামো অনুমোদন হয়নি

আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০২৪, ২:০২ অপরাহ্ণ


জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে :


জন্মলগ্ন থেকেই অধ্যাদেশের বলেই চলছে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অর্থ উপার্জনকারী এবং আত্মনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। ফলে বিএমডিএর উন্নয়ন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিএমডিএর বয়স ৩৭ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু জনবল অবকাঠামো অনুমোদন হয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক

। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির জনবল নিয়োগ উপেক্ষিত হচ্ছে। অন্যদিকে লোকবল সংকটের কারণে প্রকল্প্রে কাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। আর এই সুযোগে বিএমডিএর কিছু সুবিধাভোগী কর্মকর্তা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে অস্থায়ীভাবে ও ইচ্ছেমত প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্প কমিটি গঠন ও প্রকল্প পরিচালক পদ সৃষ্টি করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গম্প্রতি বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের কারণে বেশ কয়েক বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পরেও আব্দুর রশীদকে তার মূলপদ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলির দায়িত্বে ফেরৎ পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং জনৈক অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম মুকুলকে নির্বাহী পরিচালকের পদে পদায়ন করে।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে আব্দুর রশীদ সহ বেশ কিছু কর্মকর্তা নাম উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়নি এমনকি বরখাস্ত পর্যন্ত করা হয়নি। এমন অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বিএমডিএর কর্তৃত্ব পর্যায়ে। এসকল অনিয়মের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানে জনবল অবকাঠামো অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রিতাকে ।

উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত “বারিন্দ ইন্টিগ্রেটেড এরিয়া দেভলপমেন্ট” (বি আইএডিপি) অনুমোদিত হয়। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বিএডিসি কর্তৃক এই প্রকল্পের কাজ চলমান থাকে। কিন্তু বিভিন্ন কাজে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ১৯৯২ সালের ১০ জানুয়ারি রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ২৫ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় বিএমডিএ।

এ সময় এ প্রকল্পে লোকবল ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ এবং প্রকল্পটি কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত ছিল। কিন্তু ২০০৩ সালে এক সরকারি আদেশে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১২৫ টি উপজেলায় বিএমডিএ’র কাজ সম্প্রসারিত করা হয়। বিএডিসির পরিত্যক্ত, লোকবলহীন ও লোকসানি ওই ১০০টি উপজেলায় নতুন করে সেচ কার্যক্রম চালু করতে গিয়ে হোঁচট খায় ও সমস্যার শুরু হয়।

কারণ ওই ১২৫টি উপজেলায় পুনরায় সেচ কাজ চালানোর জন্য নতুন কোনো জনবল নিয়োগ করা হয়নি এবং প্রায় বিনে পয়সায় সেচ দেওয়ার স্থলে বিএমডিএর সেচ চার্জ চালু করতে রীতিমত হিমসিম খেতে হয়। পূর্বের ২৫ টি উপজেলায় যে লোকবল ছিল তা দিয়েই ১২৫ টি উপজেলার কাজ পরিচালনা হচ্ছে অদ্যবধি।

ইতোমধ্যে সেই লোকবল কমতে কমতে ৭৮৬ জনে নেমে এসেছে। উপজেলা ও জেলা সদরে অধ্যাদেশের বলে অস্থায়ীভাবে মাস্টার রোলে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে জনবল সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। জানা গেছে, আগামী ৪/৫ বছরে আরও প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবসরে যাবেন।

তখন এই জনবল দাঁড়াবে ৫০০ জনে। ফলে প্রকল্পের সেচ কার্যক্রম সহ যাবতীয় কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই জনবল অবকাঠামো অনুমোদন সাপেক্ষে লোকবল নিয়োগ দেওয়া জরুরি বলে প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ মনে করেন।

জানা যায়, ২০১৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির আইন প্রণীত হয়েছে। এরপরে দীর্ঘ ৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে কিন্তু জনবল অবকাঠামো অনুমোদন হয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক। প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই কিছু কুচক্রি ও স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্নভাবে জনবল অবকাঠামো অনুমোদনে ও প্রবিধান মালা প্রণয়নে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রবিধান মালায় ত্রুটি আছে উল্লেখ করে সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে কয়েকদফা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ফাইল ফেরৎ পাঠিয়েছে। এই ত্রুটি উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ঠিক করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএমডিএ নিজেদের মনগড়া পদ সৃজন, নিয়োগ, প্রমোশন এর যোগ্যতা নির্ধারণ করে জনবল অবকাঠামো তৈরি করে বলে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিচ্ছে না বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। আবার এমন মতামতও চালু আছে যে মন্ত্রণালয়ের সাথে বিএমডিএ’র যেমন অন্তর্দ্বন্দ্ব আছে তেমনি সমঝোতা আছে বলে বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবৎ ঝুলে আছে।

জনবল অবকাঠামো অনুমোদনে এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণ সম্পর্কে বিএমডিএর সচিব জোবায়ের হসেনকে ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। একই প্রশ্ন বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাসেমকে ফোনে করা হলে তিনি বলেন, এগুলো ফোনে বলা যাবে না,সশরীরে বিএমডিএ ভবনে হাজির হতে হবে।

জনবল অবকাঠামো প্রস্তুত করার জন্য কত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে সচিবের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। এ ছাড়াও আরও কিছু প্রশ্ন করতে গেলে তিনি একটি জরুরি মিটিং এ উপস্থিত হবার কথা বলে ফোন ছেড়ে দেন। বিএমডিএর বেশ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী জানান, প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে জনবল অবকাঠামো অনুমোদন সহ জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ প্রয়োজন।

অন্যথায় এই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ১২৫ টি উপজেলার ১৫ হাজার ৭১৫ টি সেচযন্ত্র পরিচালনা করে ৪ লাখ ৯৬ জাজার ১৯৮ হেক্টর জমির আবাদ অসম্ভব হয়ে যাবে। ব্যাহত হবে বাৎসরিক ৬ কোটি মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন। ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় ১০ লক্ষাধিক কৃষক পরিবার ।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ