সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০১৬ ও ২০১৭ সালের একই তারিখে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। একই দিনে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় এই বিষয়কে কেন্দ্র করে নগরবাসীর মধ্যে নানা কৌতুহল ও জিজ্ঞাসা লক্ষ্য করা গেছে। দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পরপর দুই বছরে একই দিনে ভূমিকম্পের কারণ খুঁজতে নিমগ্ন ছিলেন অনেকেই। আবার কেইবা ভূমিকম্পের সাথে পাপ-পূণ্যের হিসাব করতেও ছাড়ছে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প হওয়ার বিশেষ কারণ আছে। তাকে বৈজ্ঞানিক সূত্রের সাহায্যেই ব্যাখ্যা করা যায়।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৯ মিনিটে মাঝারি মাত্রার এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ১। গত বছর একই তারিখে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। ভারতের মনিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলে উৎপত্তি ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭ রিখটার স্কেলে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতের ভূমিকম্প নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মাওলাইক এলাকায়। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৪২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। মধ্যরাতের এই ভূমিকম্পে বাংলাদেশে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এর আগে মঙ্গলবার বেলা ৩টা ৯ মিনিটে ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ কেঁপে ওঠে। এ ভূমিকম্পে আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সুনামগঞ্জে এক বৃদ্ধ ও এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। বিকেলের দিকে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৭৬ কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরায়। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫।
এদিকে একই তারিখে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়াকে কেন্দ্র করে নগরবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কুসংস্কার। অনেকের ধারণা, দেশে বেশি পাপ বেড়ে যাওয়ায় আল্লাহ গজব দিচ্ছে। এইজন্য বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। আগে তো এতো ভূমিকম্প ছিলো না। অনেকে এই ভূমিকম্পের জন্য সরকারকেও দায়ী করছেন। কাজীহাটার এলাকার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ইদরিস আলী বলছেন, দেশে বেশি পাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে আল্লাহ গজব দিচ্ছেন। তাই এত বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। এত হত্যা, খুন-খারাবি ও অশ্লীলতা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে।
তালাইমারী এলাকার শওকত আলী বলছেন, সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশে পাপ বেড়ে গেছে। কোনো নিয়ম নেই। সরকারী দলের লোকেরা সাধারণ মানুষদের ওপর জবরদখল চালাচ্ছে। নির্যাতন করছে। মানুষ হত্যা করছে। তার আলামত হিসেবেই এই ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। দেশ আর বেশিদিন টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার জন্য ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, পাপ বেড়ে যাওয়া বা কমার সঙ্গে ভূমিকম্পের কোনো সম্পর্ক নেই। ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণেই ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, পৃথিবীর সৃষ্টি থেকেই ভূমিকম্প ছিলো। যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে ততদিন ভূমিকম্প থাকবে। কারণ এই ভূখন্ডটি সঞ্চরণশীল সাতটি প্লেটের ওপর আছে। প্রতিদিন শত শত ভূমিকম্প হয়। কিন্তু সেইগুলো ডেড বিধায় আমরা অনুভব করি না। ফলে ভূমিকম্পের সঙ্গে কুসংস্কারের বিষয়টি কখনোই ঠিকনা। প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণেই এই ভূমিকম্প হতে থাকবে।