৫০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ার সাথে!

আপডেট: জুন ২৭, ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ণ

প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ চাই


মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইসে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে একটি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ২৪ জুন সচিবালয়ে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুইয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতিমন্ত্রী এ সময় উদ্বেগজনক তথ্যও জানান সাংবাদিকদের। তাঁর দেয়া তথ্যমতে অনলাইন জুয়ায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে বিভিন্ন বয়সের ছেলে-মেয়েরা যুক্ত হয়েছেন। এমনকি অনেক বয়স্ক, রিটায়ার্ড পারসনরাও এ জুয়ায় আসক্ত। ৫০ লাখ মানুষ এ অবৈধ জুয়ার সাইটগুলোর সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন।

প্রতিমন্ত্রীর দেয়া তথ্যমতে ইতোমধ্যেই দুই হাজার ছয়শোটি জুয়ার সাইট ব্লক করা হয়েছে। এখন মোবাইল অ্যাপগুলো ব্লক করা হচ্ছে এবং এটা চলতে থাকবে।
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে জুয়া একটি প্রাচীন খেলা। এটি একপ্রকার অবসর-বিনোদনের মাধ্যমও। তবে, সম্প্রতি নতুন আতঙ্কের নাম অনলাইন জুয়া। এতে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি থাকলেও পিছিয়ে নেই বয়স্করাও। শুধু অনলাইন নয়, অন্যান্য মাধ্যমেও জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অনেকেই। তবে, প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সঙ্গে জুয়ার অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে অনলাইনে জুয়াতেই মানুষের অংশগ্রহণ বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে এক ধরনের কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে। প্রথমে অল্প টাকা বিনিয়োগে করে পরে লোভে পড়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট বাংলাদেশেও পরিচালনা করছে তাদের এজেন্টরা। জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে।

তবে, জুয়ার মাধ্যমে যে শুধু দেশের কিংবা ব্যক্তির অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপরটা তা নয়। জুয়ায় আসক্তির কারণে অনেকেই পারিবারিক অশান্তিতে ভুগছেন। সামাজিক অপরাধেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনলাইন জুয়া। আরো আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, মানুষ শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে জুয়ায় আসক্ত হয় না। এটি এক ধরনের মানসিক রোগও। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, জুয়ার নেশা যখন জুয়াড়িদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং দৈনন্দিন জীবনে নিরানন্দের কারণ হয়ে ওঠে তখন তা গুরুতর সমস্যায় পরিণত হয়। ভারতের নিমহান্স হাসপাতালের এক গবেষণা বলছে, জুয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ৮৭.৫% সমস্যা একজন জুয়াড়ির জীবনে ২৫ বছর বয়সের আগেই শুরু হয়।

জুয়া খেলতে খেলতে অনেক মানুষই নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং এই আচরণের জন্যই তাদের গোটা জীবনটা সমস্যায় জর্জরিত হয়। জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে তারা শুধু জুয়া খেলার সুযোগ খোঁজে এবং জুয়ার মধ্যেই নিজেদের জীবনকে ডুবিয়ে রাখে। অনেকে টাকাপয়সা খুইয়ে এবং নানা বিপত্তি সত্ত্বেও জুয়া খেলা ছাড়তে পারে না। বহুবার জুয়ার নেশা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেও অনেকে শেষ পর্যন্ত জুয়া খেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে না। এটা অনেকটা মাদকের আসক্তির মতো।

এই পরিস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রীর উদ্যোগ ও প্রতিশ্রƒতি আশার আলো দেখাচ্ছে। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ধারাবাহিকভাবেই উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের অংশগ্রহণও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে উদ্যোগি হতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ