৫৪ ও ১৬৭ ধারা প্রয়োগে নীতিমালা ।। মানবাধিকার রক্ষায় নতুন পথের সূচনা

আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০১৬, ১১:৫১ অপরাহ্ণ

আইনের শাসনের পথে বাংলাদেশ আরেকটি ধাপ অতিক্রম করলো। এটি কোনো রাজনৈতিক সদিচ্ছা থেকে নয়Ñ দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়েই মানবাধিকার সমুন্নত রাখতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার (৫৪ ধারা) ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারা (১৬৭ ধারা) প্রয়োগ নিয়ে এক নীতিমালায় এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, আটক ব্যক্তি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে মেডিকেল প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ নিতে পারবে বিচারিক আদালত। এ দুই ধারা নিয়ে হাই কোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসেছে এই নীতিমালা। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য সন্দেহভাজন কাউকে হেফাজতে নিলে রিমান্ডের মেয়াদ শেষে তাকে আদালতে হাজির করা ওই কর্মকর্তার দায়িত্ব। এ ধরনের ক্ষেত্রে পুলিশ রিপোর্ট বা অন্য কোনোভাবে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলে বিচারক একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে নির্যাতনের বিষয়টি পরীক্ষা করার নির্দেশ দেবেন। মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয়ে থাকলে লাশ তুলে পুনঃপরীক্ষা করতে হবে।
“মেডিকেল প্রতিবেদনে নিপীড়নে মৃত্যুর বিষয়টি পাওয়া গেলে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুসারে ওই কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কমান্ডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিতে হবে। “মেডিকেল প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে নির্যাতনের ফলে হেফাজতে মৃত্যু বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হলে বিচারক স্বঃপ্রণোদিত হয়ে ওই অপরাধ আমলে নেবেন। মামলা দায়েরের অপেক্ষা করবেন না।”
২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাই কোর্ট এক রায়ে ৫৪ ও ১৬৭ ধারার কিছু বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি ছয় মাসের মধ্যে সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয় সরকারকে।
বৃহস্পতিবার ৩৯৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অতিরিক্ত আ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের বলেন, “হাই কোর্টের রায়টি মোডিফাই করে আপিল বিভাগ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে।”
খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উল্লিখিত ধারা দুটি সব সময় সব সরকার আমলে যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছে। ফলে মানুষ নিদারুণ নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নির্যাতনে মৃত্যুর তালিকা মোটেও সংক্ষিপ্ত নয়। শুধু যে অপরাধীরাই এর শিকার হয়েছে তা নয়- অনেক নিরীহ-নিরাপরাধ মানুষও ব্যাপকভাবে নির্যাতন ও হেনস্থার শিকার হয়েছে। এটিকে সব সময় বিরোধী রাজনৈতিক দল মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে সভা-সমাবেশে উচ্চকিত হলেও তারাই ক্ষমতাসীন হয়ে ওই একই ব্যবস্থা বহাল রেখেছে।  অনেক ক্ষেত্রে ৫৪ ধারা প্রয়োগ করে বিরোধী রাজনীতিকদের হয়রানির অভিযোগ থাকেই।
সর্বোচ্চ আদালত ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে নীতিমালা এবং তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় সহায়ক হবে বলেই আমরা মনে করি। অন্তত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের নির্যাতনের প্রতি বেপরোয়া মনোভাবের পরিবর্তন হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ