সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
এলাকাবাসী ধরিয়ে দিল নগরীর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীকে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিরেবদন দৈনিক সোনার দেশ সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ বিভাগ যে মুহুর্তে মাদক ব্যবসায়ীদের মাদকব্যবসা ছাড়ার কঠোর নির্দেশ দিচ্ছেন এবং একই সাথে পুনর্বাসন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, সে মুহুর্তে জনতার জাগরণ পুলিশের উদ্যোগকে তাৎপর্যময় করে তুলেছে। পুলিশের উদ্যোগের ফলেই যদি এলাকাবাসীর এই জাগরণ হয় তা হলে বিষয়টি আমাদের মাদকমুক্ত সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে উৎসাহিত ও এগিয়ে নেয়া দরকার। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাধারণ মানুষ ইতিবাচক পরিবর্তনে সম্পৃক্ত হলে পরিবর্তনটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। মহানগর পুলিশ কি নাগরিকদের সে ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারছে?
আলোচনায় মাদক ব্যবসায়ী লিজা ও তার বোন লাকী। তাদের বিষয়টি নতুন কিছু নয়Ñ মাঝেমধ্যেই তারা পত্রিকার খবরে আসে। এবং সেটির সূত্র মাদক কিংবা অন্য কোনো অপরা। শুক্রবার মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ার কারণে প্রতিবন্ধী সোহেলীকে মারধর করলে স্থানীয় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে লিজা ও তার বোনকে ঘেরাও করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পত্রিকার প্রতিবেদন মতে, দীঘদিন থেকে লিজা, তার স্বামী মনির এবং বোন শিলা, লাকী, যুথি, ভাই রিভারসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এ মাদক সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন লিজা ও তার স্বামী মনির। মাদক ব্যবসার কারণে এলাকায় সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে শুক্রবার সকালে প্রতিবাদ করেন লিজার প্রতিবেশি সোহেলী ও তার ভাবী নাসিমা। এসময় লিজা ও তার সহযোগীরা প্রতিবন্ধী সোহেলী ও নাসিমাকে লোহার পাইপ, কাঠের লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক প্রহার করে। পুলিশ লিজা ও তার বোনকে বিভিন্ন ধরনের মাদকসহ আটক করে। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মহানগর পুলিশ কমিশনার কর্তৃক মাদকের বিরুদ্ধে নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি নগরবাসীকে উৎসাহিত করছে তাতে সন্দেহ নেই। পুলিশ কমিশনারের আন্তরিকতার ব্যাপারেও নগরবাসীর কোনো দ্বিধা নেই। মানুষ খুবই আশাবাদী হয়ে হয়ে উঠেছে। লিজা ও তার বোন লাকি এলাকাবাসী কর্তৃক ধৃত হয়ে পুলিশে সোপর্দ হলে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক যে, পুলিশকে এড়িয়ে কীভাবে তারা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। কারণ নগরীর চিহ্নিত মাদক ব্যসায়ীদের মধ্যে তারাও অন্যতম। তারা পুলিশের নজরদারিতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। নজদারির ঘাটতিটাই খুব অনুমিত হচ্ছে।
না! এটা অবাক হওয়া আর কিছু নয়! রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দুর্বৃত্তদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে অনেক আগেই। দলগুলোর পক্ষ থেকেও পরিশুদ্ধ হওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই। গ্রেফতার লিজা রাজশাহী জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক। পত্রিকান্তরে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনের ‘যুগ্ম সম্পাদক’ এর পদ অলংকৃত করে আছেÑ এটা রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বপনার সামিল। লিজা গ্রেফতার হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের কোনো প্রতিক্রিয়াও আমাদের জানা নেই। রাজনৈতিক দলগুলো এ ভাবে দুর্বৃত্তদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে থাকলে রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়নের গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে পুলিশও ভূমিকা রাখতে পারবে না। সাধারণ মানুষ দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে থাকলে তারাও নিজেদের গুটিয়ে রাখতে সচেষ্ট হবে। এমন একটি সামজিক চিত্র নিশ্চয় আমাদের কাম্য নয়। মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রামটি শুধু পুলিশের নয়Ñ রাজনৈতিক নেতৃত্ব, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। সব অংশের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে সমাজের দুর্বৃত্ত শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। আমরা সমাজের সেই শক্তিরই উদ্বোধন চাই, যা সমাজকে ইতিবাচকভাবে পাল্টাতে চায়।