অছাত্র-ব্যবসায়ীদের নিয়ে নগর ও জেলা ছাত্রদলের কমিটি দুই নেতার পদত্যাগ

আপডেট: অক্টোবর ১৪, ২০১৬, ১১:৫০ অপরাহ্ণ

logo

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিবাহিত, অছাত্র, আইনজীবী, ঠিকাদার, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও শিক্ষক এমন ব্যক্তিদের নিয়েই গঠন করা হয়েছে রাজশাহী মহানগর ও জেলা ছাত্রদলের কমিটি। বৃহস্পতিবার কেন্দ্র থেকে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের ১১সদস্যের এই কমিটির মাত্র একজনেরই ছাত্রত্ব রয়েছে। এই কমিটি নিয়ে চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন খোদ সদস্যরাই।
তারা বলছেন, ত্যাগী ও যোগ্যদের কমিটি স্থান দেয়া হয়নি। এবিষয়ে জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির যুগ্মসম্পাদক শাহরিয়ার রহমান জিতু বলেন, সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া রেজাউল করিম টুটুল কোনোদিন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা বা জেলা কমিটির কোনো পদেই ছিলেন না। অথচ অদৃশ্যশক্তির বলে তিনি সভাপতি পদ নিয়ে বসেছেন। তাকে আমরা কেউই চিনিও না। অছাত্র, বিবাহিত ও ব্যবসায়ীদের দিয়ে কখনো ছাত্রদলের কার্যক্রম চলতে পারে না। আমাকে যুগ্মসম্পাদক পদে কেন রাখা হয়েছে তাও বোধগম্য নয়। কমিটিতে অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোই তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নতুন কমিটি ঘোষণার পর পরই মহানগর শাখার যুগ্মসম্পাদক আকবার আলী জ্যাকি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা উল্লেখ করে নবগঠিত কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তিনি রাজশাহী সিটি কলেজের সভাপতির পদ থেকেও পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে একই ধরনের সমস্যা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছেন ফাইসাল আহমেদ শান্ত। তিনি ছাত্রদল সিটি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
ছাত্রদলের রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি হিসেবে আসাদুজ্জামান জনি, সিনিয়র সহসভাপতি মর্তুজা ফামিন, সহসভাপতি মাহমুদ হাসান শিথিল, সহসভাপতি সারোয়ার জাহান শিবলী, সহসভাপতি গোলাম রাব্বানি, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রবি, যুগ্মসম্পাদক আকবর আলী জ্যাকি, যুগ্মসম্পাদক নাহিয়ান আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মাকসুদুর রহমান সৌরভ মনোনীত হয়েছেন।
ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী জানান, নতুন সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি আগে সংগঠনের কোনো পদেই ছিলেন না। অথচ হঠাৎ করেই সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন। ছাত্রত্ব বহু আগেই হারিয়েছেন। এখন সিনিয়র সহসভাপতি মর্তুজা ফামিন রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তবে এর আগে তিনি জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রবি ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে ভোটে দাঁড়িয়ে ফেল করেন। এলাকায় তিনি যুবদল নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও এবার হয়েছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। তারও ছাত্রত্ব নেই।
এদিকে রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে রয়েছেন- সভাপতি রেজাউল করিম টুটুল (বাগমারা), সিনিয়র সহসভাপতি শাহরিয়ার আমিন বিপুল (চারঘাট), সহসভাপতি সোহেল রহমান (বাঘা), সহসভাপতি আবুল বাশার, সহসভাপতি নেফাউর রহমান সুমন (পুঠিয়া), সহসভাপতি শফিউল ইসলাম সজীব (পবা), সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম জনি (দাসপুকুর), যুগ্মসম্পাদক শাহরিয়ার রহমান জিতু (হোসেনীগঞ্জ), যুগ্মসম্পাদক হাবিবুর রহমান রনি (বাঘা), যুগ্মসম্পাদক মো. শাহনেওয়াজ (পবা), যুগ্মসম্পাদক আরেফিন কনক (পাঠানপাড়া), যুগ্মসম্পাদক ইমন আহম্মেদ সুমন (দূর্গাপুর), যুগ্মসম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন লাবিব (পুঠিয়া) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল সরকার ডিকো (রাজারহাতা)। জেলা শাখা ছাত্রদলের এই কমিটিরও একই অবস্থা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারোই ছাত্রত্ব নেই। ১১সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির ছাত্রত্ব রয়েছে মাত্র একজনের। তিনি যুগ্মসম্পাদক হাবিবুর রহমান রনি।
নবঘোষিত জেলা ছাত্রদল সভাপতি রেজাউল করিম টুটুল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে চাকরি করেন। তিনি নগরীর লক্ষ্মীপুরে হলিক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক কন্যাসন্তানের পিতা। সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম জনিরও ছাত্রত্ব নেই। তিনি ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে সুদের ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এইচএসসি পাস হলেও নিজেকে ডিগ্রি পাস বলে পরিচয় দেন জনি। তার স্ত্রী একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। জনি গরু ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। সিনিয়র সহসভাপতি শাহরিয়ার আমিন বিপুল এখন বেসরকারি বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। সহসভাপতি আবুল বাশার সাবেক ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউজ্জামান পরাগের মালিকাধীন ফাস্টফুডের দোকানের সেলসম্যান। সহসভাপতি নেফাউর রহমান সুমনের ছাত্রত্ব নেই। যুগ্মসম্পাদক শাহরিয়ার রহমান জিতুও কয়েকদিন আগে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। এই কমিটির যুগ্মসম্পাদক শাহনেওয়াজ স্থানীয় পবা উপজেলার একটি ছাগলহাটের ইজারাদার। আরেক যুগ্মসম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন লাবিব আইনজীবী। যুগ্মসম্পাদক আরেফিন কনকেরও ছাত্রত্ব নেই। সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল সরকার ডিকো অলিম্পিক বিস্কুটের ডিলার। ছাত্রত্ব নেই।
তবে যোগাযোগ করা হলে নবঘোষিত রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম টুটুল বলেন, তিনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসায় জড়িত ও বিবাহিত। তবে ঢাকায় তিনি প্যাথলজি বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।
মহানগর ছাত্রদলের নতুন সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি বলেন, নিয়মিত ছাত্র নই। তবে রাজশাহী আইন মহাবিদ্যালয়ে ২০১৪ সালে ভর্তি হয়েছি। আর তিনবছর আগে বিয়ে করেছি। এখন টুকটাক ব্যবসা করি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৯ সালে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদল ও ২০১১ সালে জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠিত হয়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ