অনুমোদনহীন প্রতিষেধক || ব্যবস্থাপত্র একাই দেন, করেন বিক্রয়ও

আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০১৬, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



অনুমোদনহীন একটি প্রতিষেধক নারীদের গর্ভে সন্তান ধারণের চিকিৎসায় ব্যবহারে রোগিদের একাই ব্যবস্থাপত্র দেন ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা। বিক্রিও করেন তিনি একাই। নগরীর কোনো ফার্মেসিতে এ ওষুধ পাওয়া যায় না। তার কাছ থেকেই চড়ামূল্যে রোগিদের এ প্রতিষেধক ক্রয় করতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এই প্রতিষেধকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। যাদের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছে তারা এই প্রতিষেধক শরীরে নেয়ার ফলে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। নগরীর লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত মাদারল্যান্ড হসপিটালে তার চেম্বার। তিনি সেখান থেকে রোগিদের সেবায় চিকিৎসাপত্র দিয়ে থাকেন। যে প্রতিষেধকটি নেবার কারণে রোগিদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তার নাম ‘ইনজেকশন হিউমগ’ (রহল. ঐঁসড়ম (১৫০ ও.ট)। এই প্রতিষেধকের বাজারজাতকারী ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এর কোনো অনুমোদন নেই। জানা গেছে, খোদ ভারতেই প্রতিষেধকটি নিষিদ্ধ। এই প্রতিষেধকটি নারীদের গর্ভে সন্তান ধারণে হরমোন বৃদ্ধির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। নারীদের মাসিকের ৩য়, ৫ম, ৭ম, ৯ম ও ১১তম দিনে প্রতিষেধকটি ব্যবহার করতে হয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রোগিরা জানিয়েছেন, প্রতিষেধকটি ব্যবহারে ফলে ত্বক খসখসে হয়ে যায়, শরীরে ব্রণ বের হয়, চোখ লাল হয়, মেজাজ খিটখটে হয়ে যায়, মুখম-লে দাঁড়িগোফ বের হয় ও অস্বাভাবিক যৌনাকাঙ্খা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া প্রতিষেধকটি শরীরে নেয়ার পর শরীরের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মনে হয়, অস্বাভাবিক কোনো জগতে চলে গেছি।
গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদক নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসির দোকানে খোঁজ করেও প্রতিষেধকটি পায় নি। ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা প্রতিষেধকটি একাই প্রেসক্রাইব করেন, বিক্রিও করেন তিনি একাই। তিনি হচ্ছেন ওই প্রতিষেধকের ডিপো।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা বাংলাদেশে প্রতিষেধকটির অনুমোদন নেই স্বীকার করে বলেন, প্রতিষেধকটির গুণাগুণ ও কার্যকারিতার কথা বিবেচনা করে কিছুদিন ব্যবহার করেছি। এতে আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছি। অনেক নারীদের সন্তান হয়েছে এই প্রতিষেধকটি ব্যবহারের ফলে। এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই। তবে বাংলাদেশে বৈধতা না থাকায় বর্তমানে প্রতিষেধকটি ব্যবহার করছি না।
বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ব্যবহার করতেন এই বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকার একটি পার্টি এসে দিয়ে যেত। তারা বৈধতা না থাকলেও সব নিয়ম মেনেই নিয়ে আসতেন। তারা প্রতিষেধকটির লাইসেন্স নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান।
নিজে বিক্রি করার বিষয়ে ফাতেমা সিদ্দিকা বলেন, এখন দেশে-বিদেশে বেশিরভাগ ডাক্তার নিজেদের সেন্টার থেকে ওষুধ নিতে বলেন। কারণ এতে ওষুধের গুণাগুণ ও কার্যকারিতা ভালো থাকে। এই প্রতিষেধকটি ৬ ঘণ্টার ফ্রিজের বাহিরে রাখলে তার গুণাগুণ ও কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ফার্মেসিতেও ফ্রিজ আছে কিন্তু তাদের অনেক ওষুধ। ফলে আলাদাভাবে এই প্রতিষেধকটির প্রতি গুরুত্ব দিতে পারেন না। চড়ামূল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় রুপিতে এই প্রতিষেধকটির একটি ডোজের মূল্য ১৮৪৬ রূপি। অথচ আমি এই প্রতিষেধকটির একটি ডোজ ১৮৫০ টাকায় বিক্রি করতাম।
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. ফেরদৌস নিলুফার বলেন, গ্রুপ না দেখলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সঠিক বলা সম্ভব না। তবে যেকোনো ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সেটা কম বা বেশি। নিজে ওষুধ বিক্রয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তো ঠিক না। ওষুধ তো ফার্মেসির মাধ্যমেই বিক্রয় করতে হয়। কম দামে ওষুধ বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা যে কীভাবে পারেন! তবে তিনি বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ করলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ