অন্ধকারে আলো

আপডেট: ডিসেম্বর ১, ২০২৩, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

প্রবীর তাসলীম

বিশাল উদ্যান, উদ্যান জুড়ে শাল, মেহগনি, কড়ই আর মহুয়ার গাছ থাকায় দারুণ সুগন্ধে ভরে আছে এই
নিশুতি রাত। উদ্যান পেরিয়ে বিশাল হলের শেষ কোণায় আমরা দুজন থাকি। পূর্ণিমার ভর রাতে, হল থেকে বেরিয়ে বড়ো রাস্তাটা পেরিয়ে উদ্যানের রাস্তা ধরে মাঝ বরাবর চলে এলাম। এখানে অনেক দূর পরপর একটা করে বসার জায়গা করা হয়েছে। উদ্যানের প্রবেশ মুখে আলোর বাবস্থা থাকলেও মাঝে কোনো বিদ্যুতের আলো নেই কিন্তু আজ পূর্ণিমা বলে গাছের ফাঁক দিয়ে জোছনার আলোয় বেশ পরিষ্কার।

একে নিশুতি রাত তার উপর চারিদিকে বেশ থমথমে, কারণ দুমাস ধরে আর্মি দেশ চালাচ্ছে। সামনে
ইলেকশন হবে তাই যারা গভীর রাত পর্যন্ত কালো টাকা খরচ করে শহরকে দাবড়িয়ে বেড়াতো তারা সব গা
ঢাকা দিয়েছে। তাদের ঘরে ঘরে চলছে তল্লাশি কালো টাকার সন্ধানে, ধরা খাচ্ছে সব রাঘব বোয়ালেরা।

আমরা এসেছি জীবনের টানে এই শহরে সুন্দর ভবিষ্যত গড়বো বলে। তাই এসব রাষ্ট্রের ধারায় আমরা পড়ি
না, আজ হলের খাবার শেষ হয়ে গেছে, দুজন বেরিয়েছি রুটি আর সবজি খাবো বলে। খাওয়া শেষ করে
উদ্যানে এসে ঘুরছি, একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম দুজন। সিগারেট ধরিয়ে বেশ টানছি হঠাৎ খেয়াল করলাম, আমাদের বসার জায়গা থেকে বেশ কিছু দূরে আরেকটা বসার জায়গার পেছনে কামিনী ফুলের গাছ তাই জায়গাটায় একটা ঝোপের মতো তৈরি হয়েছে।

খেয়াল করলাম ঝোপটা অনেক জোরে জোরে নড়ছে। আমরা একটু ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়ালাম, খেয়াল করলাম সত্যিই ঝোপটা অনেক জোরে নড়ছে। এবার একটু সাহস করে ঝোপের দিকে এগুতে লাগলাম। এবার একটু দূর দিয়ে ঝোপের উল্টো দিকে গিয়ে যা দেখলাম ভয় পাবার মতো কিছু নয়। টাকার প্রয়োজনে এরা দেহ বেঁচে। আর সামনে না এগিয়ে আমরা পেছন ফিরতে লাগলাম। এবার দুজনের একসঙ্গে নজরে এলো, দু’তিনটে ব্যাগ, বস্তা সদৃশ্য কিছু একটা পড়ে আছে। আমি এগুতেই সঙ্গী বলে উঠলো, দরকার নেই। এগুলো ঐ ঝোপের আড়ালে থাকা ওদের ব্যাগ, আমি বললাম না ওরা তো অনেক ফাঁকে। এতদূর ওদের জিনিস কেন রাখবে? আমি কাছে গেলাম, একটা থলের মতো ব্যাগ খুলতেই দেখি টাকায় ভর্তি। ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলাম, এবার জ্ঞানে এসে সঙ্গীকে বললাম- জলদি কাছে আয়। এই ব্যাগগুলো ধর। সোজা রুমের দিকে সঙ্গী ব্যাগ নিয়ে- আমার পেছন পেছন।

ও অনেক প্রশ্ন করছে আমি কোনো উত্তর না দিয়ে বললাম আগে তাড়াতাড়ি রুমে চল। এই বলে তাকে দ্রুত চলার তাগাদ দিই। কারণ জলদি ঘরে যেতে না পারলে পথে নানা রকম বিপদ ওঁৎ পেতে আছে। জানিনা কোন বিপদ কখন ঘাড়ে এসে পড়ে। এমন সব আশঙ্কা মাথায় নিয়ে হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে চোখের সামনে রুমের দরজা এসে যায়। -তাড়াড়াড়ি ঘরে ঢোক, এই বলে রুমে ঢুকি। রুমে এসে ব্যাগ খুলতেই দুজনের চোখ ছানাবড়া, এত টাকা, বুঝতে দেরি হলো না, আর্মির তাড়া খেয়ে ফেলে দিয়ে গেছে। জনগণকে শোষণ করা টাকা এগুলো।

সে তো বুঝলাম, কিন্তু এতোগুলো টাকা, কার না কার টাকা, আমরা নিবো কেন? দেখ্, তোর এই সন্ন্যাসীমার্কা কথা রাখ। মানুষ সারা জীবন কাজ করে টাকার জন্য আর সেই টাকা পেয়েও তা রাখবো না? এমন মানুষ আমি না। আমরা হন্যে হয়ে টাকার পিছে ছুটছি। মান-সম্মান, জাত-পাত, ঊঁচু-নিচু এসবের কোনো ধারধারে না মানুষ। সারাজীবন কেবল টাকা আর টাকা। সব কিছুর মূলে রয়েছে শুধুই টাকা। ওহ্, আমি আর ভাবতে পারছি না। দে আমাকে টাকার ব্যাগটা দে, আগে আমি এই টাকার গন্ধ শুঁকি। ওহ্, কি মিষ্টি! ধেৎতরি, রাখতো তো তোর গন্ধ শুঁকাশুঁকি। দেশের অবস্থা ভালো না, যখনতখন আমাদের রুমে রেট হতে পারে। তাই টাকা নিয়ে চল সটকে পড়ি। এই বলে বন্ধুর মুখটা কেন জানি ঘেমে উঠলো।

কপাল বেয়ে দড়দড় করে ঘাম ঝরছে। তার মধ্যেই আরেকজন বলে বসে, -যাক, আমরাও অসহায় জনগণের দুজন। আমরা যদি এ টাকা ভোগ করি তাহলে কি কোনো ক্ষতি আছে? -দ্যাখ, তোর এই ভোগবাদি কথার বিপক্ষে আমার আবস্থান। কিন্তু এ কথা বন্ধু কোনো মতেই মানতে রাজি না। বলে, ঘূর্ণায়মান প্রকৃতির চক্করে টাকাগুলো আমাদের কাছে চলে এসেছে। আমাদের আর কষ্ট করতে হবে না। -হ্যাঁ বললেই হলো, দ্যাখ কষ্ট করেই বাঁচতে হয়। তোর এই লোভ লোভ ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে না। -ওসব বাদ দে দোস্ত্, এনজয় ইয়র সেল্ফ। নাও আওয়ার অয়ার ইজ ফিনিস্ড, আমাদের যুদ্ধ শেষ। চল দোস্ত বাড়ি ফিরে যাই।