আত্রাইয়ে বন্যায় পানিবন্দি অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ

আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০১৭, ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

রাণীনগর প্রতিনিধি


আত্রাইয়ে বাঁধ ভেঙে এভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ -সোনার দেশ

নওগাঁর আত্রাইয়ে বন্যায় পানিবন্দি মানুষের কষ্ট বেড়েই চলেছে। নদীর পানি কিছুটা কমলেও বন্যা কবলিত অনেক এলাকায় দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় সরকারি ত্রাণ পৌঁছাতে না পারায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনাহারে থাকতে হচ্ছে অনেক বানভাসী মানুষকে।
দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। নওগাঁর আত্রাইয়ে গত কয়েকদিন থেকে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানি হুহু করে বেড়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে একদিকে নদী এলাকার শত শত জনবসতি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে হাজার হাজার জনগণ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অপরদিকে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পরিবার পরিজন ও গবাদী পশু নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। চারদিক জলাবদ্ধতার কারণে কোন কাজকর্ম করতে না পারায় চরম অভাবে দিন কাটাচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ। এদিকে গত সোমবার উপজেলার মালিপকুর নামক স্থানে আত্রাই-সড়ক ভাঙ্গার সাথে সাথে সিংড়া সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে রোগবালায় খাদ্য ওষুধ সঙ্কট। ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী রাণীনগর উপজেলার মালঞ্চি ও ঘোষগ্রামের তিনটি স্থানে ভাঙ্গার ফলে নওগাঁ জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং প্রবল বেগে যমুনা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে শাহাগোলা ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। নওগাঁ-আত্রাই সড়ক ভাঙ্গনের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন থাকায় সল্পকিছু সিএনজি, ভুটভুটি, চার্জার ভ্যান বিপরীত পথ শাহাগোলা হয়ে রানীনগর দিয়ে নওগাঁ জেলা শহরে চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলেও যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে বন্যার ফলে উপজেলার শাহাগোলা, কালিকাপুর, আহসানগঞ্জ, পাঁচুপুর, হাটকালুপাড়া ও মনিয়ারী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামের, ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ, মন্দির, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পানিতে ভাসছে। সাথে সাথে শতাধিক মাছ চাষির পকুর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার কয়েকটি স্কুল ডুবে যাওয়ায় ওই সব স্কুলে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এবিষয়ে ১নম্বর শাহাগোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আমাদের শাহাগোলা ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ইউনিয়নের উদনপৈয়, মিরাপুর, ফুলবাড়ি, পূর্বমিরাপুর, রসুলপুর, জাতোপাড়াসহ বেশ কয়েকটা গ্রামের মানুষ এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি আরো জানান, সরকারের পক্ষ থেকে এক টন পরিমান ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছি তা সকলের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তবে তিনি আরও বেশি করে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে নাগরিক উদ্যোগের শাহাগোলা ইউনিয়নের দলিত মানবাধিকার কর্মী দিনেশ কুমার পাল বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। সেই সাথে বানভাসি পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ত্রাণ তৎপরতা সচল রাখতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। এ দিকে আত্রাই কৃষি কর্মকর্তা কেএম কাউছার হোসেন জানান, এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আত্রাই উপজেলার প্রায় ২ হাজার হেক্টর রোপা আমন ধানের খেতসহ অন্যান্য ফসল। এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোখলেছুর রহমান জানান, আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করেছি। বানভাসী মানুষদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সেই সাথে স্থায়ীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আত্রাই উপজেলার বন্যার্ত বানভাসী মানুষের মাঝে যে পরিমান ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন অসহায় বানভাসী মানুষেরা। অন্যদিকে গত কয়েক দিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর আত্রাই ছোট যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাণীনগর উপজেলার বেড়ীবাঁধের ২ স্থানে ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করায় কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে ২টি স্কুলসহ সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
নদীতে পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে উপজেলার গোনা ইউনিয়নের বেতগারী থেকে নওগাঁ-আত্রাই মহাসড়কের ৩টি স্থানে ভেঙ্গে যায়। এতে করে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আত্রাইয়ের সঙ্গে রাণীনগর ও নওগাঁর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ঘোষগ্রাম ও কৃষ্ণপুর গ্রামের বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে গোনা, ঘোষগ্রাম, কৃষ্ণপুর, মালঞ্চি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কে রয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার লাখ লাখ মানুষ। তারা কেউ তাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বা স্থানীয় ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে এবং ঘোষগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
নদী সংলগ্ন আতাইকুল জনকল্যান উচ্চবিদ্যালয় ও আতাইকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই বন্যার পানিতে উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কয়েক শত পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সাহায্য বা ত্রাণ বন্যাকবলিত মানুষদের কাছে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন বন্য কবলিত এলকার মানুষেরা। এতে করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষগুলো।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ