আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাবিতে মানববন্ধন

আপডেট: মে ৬, ২০২৪, ১:৪৮ অপরাহ্ণ

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাবিতে মানববন্ধন। ছবি: সোনার দেশ

রাবি প্রতিবেদক :


আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান স্বাধীন ফিলিস্তিন আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

এসময় ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘ইসরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করতে হবে’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন, আমরা ফিলিস্তিন কে সমর্থন করি’, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ ইসরায়েল নিন্দাবাদ’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’, ‘ফ্রিডম ফর প্যালেস্টাইন’, ‘সেইভ আকসা সেইভ গাঁজা, সাবিলুনা সাবিলুনা আল জিহাদ আল জিহাদ’, ‘মোহাম্মদী মোহাম্মদী জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ, ‘বয়কট ইসরায়েল, ইসরায়েল টেরোরিস্ট’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।

রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ওয়াজিদ শিশির বলেন, দীর্ঘ ৭৫ বছর যাবৎ ফিলিস্তিনরা মানবেতর জীবনযাপন করছে, এটা খুবই অমানবিক। তাদের উপর যেই নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী, সেটা খুবই মর্মান্তিক এবং আশাহত করার মতো বিষয়। আর এখন বর্তমান বিশ্বে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমেরিকা যেটাকে মানবাধিকার বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে, সেটাই শুধু মানবাধিকার, বাকিগুলো মানবাধিকার নামে আখ্যায়িত করা হয়না।

তাহলে মানবাধিকার রক্ষা কি আমেরিকারই দায়িত্ব? মানবাধিকারের স্বীকৃতি দেয়া কি শুধুমাত্র আমেরিকার ই কাজ? অন্য কেউ কি মানবাধিকার সম্পর্কে ধারনা রাখেনা? আমেরিকা সেই রাষ্ট্র, যারা ইসরায়েলকে পেছন থেকে শক্তি যুগিয়ে যাচ্ছে।

স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, আমরা জানি আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব মানবাধিকারের কথা বলে। আমরা তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু সেই মানবাধিকারের বাইরে গিয়ে, যারা ফিলিস্তিনের কথা বলছে, তাদের ছাত্রত্ব কেন বাতিল করা হচ্ছে? তাদেরকে কেন নির্যাতন করা হচ্ছে? তাদেরকে কেন পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হচ্ছে? আমরা তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছি। আমরা চাই তাদের নির্যাতন বন্ধ হোক।

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাইর ইসলাম বলেন, এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমেরিকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। অতীতে সেখানে ছাত্রদের প্রতি দরদ দেখালেও, এবার বুলেটধারী রাষ্ট্রীয় সেনাদের লেলিয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় তিন হাজার নিরপরাধ ও অহিংস আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে আমেরিকা। এতে স্পষ্ট হয়, ফিলিস্তিন আক্রমণে শুধু ইসরাইল নয় আমেরিকাও জড়িত রয়েছে।

ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটানোর মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শাসনচক্র ইউরোপ-আমেরিকা সমগ্র পৃথিবীকে তাদের হাতের মুঠোয় নেয়। এরপর তারা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদকে তাদের করতলগত করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদের দিকে যেমন হাত বাড়িয়ে দিলো, তেমনি সেখানে একটা ইসরায়েল নামক বিষফোঁড়া তৈরী করলো।

যাদেরকে আশ্রয়হীন হিসেবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, তারাই এখন ভূমি দখল করতে করতে ওই এলাকার মানুষ ও স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। হিটলারের থেকেও শতগুন ঘৃণিত ব্যক্তি নেতানিয়াহু।

তিনি আরো বলেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের গঠন ছাড়া এই সমস্যার কোনো সমাধান হবেনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ডুয়েল গেম খেলছে, তা খেলতে দেওয়া যাবেনা। এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র একটি ধর্ম, দল বা মতাদর্শের নয়, ন্যুনতম বিবেকবান যেকারো এই প্রতিবাদ করার কথা। আমরা চাই, পৃথিবীর সকল দেশে ফিলিস্তিনিদের হত্যাকারী আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে উঠুক।

আমেরিকার ভেটোর কারণ ফিলিস্তিন জাতিসংঘের সদসপদ পায়নি। আমরা চাই, তাদের এই অহংকার দুমড়ে মুচড়ে যাবে, ইসরায়েল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা পাবে।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, আমি একজন মানুষ হিসেবে এখানে এসে দাড়িয়েছি। কারন, আমি দেখছি কিভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে ইজরায়েল। আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। একজন পিতা হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে, একজন অভিভাবক হিসেবে, একজন শিক্ষক হিসেবে এখানে দাড়িয়েছি।

ইজরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত সন্তানকে তার পিতা কিভাবে সমাহিত করেছে, আহত সন্তান কিভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে সেটা আমি দেখেছি৷ ইজরাইলি আগ্রাসনের কারনে একজন সন্তান দেখেছে, তার পিতা-মাতা কিভাবে তার চোখের সামনে নিহত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বাংলাদেশের পাসপোর্টে একসময় লিখা থাকতো ইজরায়েল ছাড়া পৃথিবীর সব দেশে ভ্রমন করা যাবে। কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা, এই শব্দটি পাসপোর্ট থেকে উঠিয়ে নেওয়া হলো। শুধু তাই নয় একসময় আমরা দেখেছি, ইজরায়েলি কোনো নাগরিকের সাথে বাংলাদেশের কেউ যদি কথা বলেছে, তাহলে তাকে জেল-জুলুমের স্বীকার হতে হয়েছে।

অথচ কিছুদিন আগে একটা ইজরায়েলি বিমান আমাদের দেশে এসে পণ্য নিয়ে গেলো, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া গেলো না। যাহোক, আমি এই মানববন্ধন থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক নুরুল আমিন সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version