শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:
পাবনার ঈশ্বরদীতে জমি জমা নিয়ে পূর্ব বিরোধের জের ধরে যুবলীগ নেতা খাইরুল নিহত ও অপর পক্ষের ইসাহক আলীর হাতের কব্জি কেটে নেয়ার ঘটনায় মামলার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে চরগড়গড়ি গ্রাম। এই সুযোগে গ্রাম ছাড়া মানুষদের ঘরের আসবাপত্র, মালামাল, খাদ্য সামগ্রি, গৃহপালিত পশু, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লুটপাটের ঘটনায় নিজেদের মালামাল রক্ষা করতে এখন আতংকগ্রস্ত পরিবারগুলো নিজেরাই মালামাল সরিয়ে ফেলছে নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে।
এসব ঘটনায় উত্তেজনা, নাশকতা, ক্ষয়-ক্ষতিসহ লুটপাট ঠেকাতে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গ্রামটিতে অবস্থান নিয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি আলহাজ্বমোড় এলাকা ঘুরে পুরুষ শূন্য বাড়ির নারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই গ্রামের আরিফা, হোসনে আরা, ছালেহা, তাসলিমাসহ বেশ কয়েকজন গৃহবধূ অভিযোগ করে জানান, থানায় নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশি গ্রেপ্তার ও হয়রানির ভয়ে পুরুষরা গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। এই সুযোগে কিছু লোকজন আসামী ও সাধারণ মানুষের বাড়িতে লুটপাট চালাচ্ছে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, কবুতরসহ আসবাপত্র লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। এই কারণে অনেকেই নিজ উদ্যোগে বাড়ির মালামাল সরিয়ে অন্যগ্রামে নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, খাইরুল হত্যা মামলায় নামীয় চার আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে কিছু মানুষ নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের মালামাল নিজেরাই অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। র্যাব ও ডিবি পুলিশের টহল চলমান রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ঈশ্বরদী সার্কেল’র অতিরিক্ত পুলিশ-সুপার বিপ্লব কুমার-গোস্বামী জানান, চর গড়গড়ি গ্রামে ২ গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার হতে একটি মামলা হয়। অপর পক্ষের হাত বিচ্ছিন্ন হয়া ইসাহক আলী ওরফে ইসাই পরিবার বা ওই পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকেই এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। মামলায় সাধারণ মানুষরা যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সেই দিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হয়েছে। পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি পূর্ব পাড়ার হোসেন মাস্টার গ্রুপ এবং চরগড়গড়ি পশ্চিম পাড়ার সাজু-খাইরুল গ্রুপের মধ্যে জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে চরগড়গড়ি পশ্চিম পাড়ার সাজু-খাইরুল গ্রুপের ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা খায়রুল ইসলাম নিহত হন এবং হোসেন মাস্টার গ্রুপের ইসাহক আলীর হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২০-২৫ জন আহত হন। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা এখনো আশংকাজনক। নিহত খাইরুলের ভাই মো. আনারুল বাদী হয়ে মকলেছুর রহমান মজনুকে প্রধান আসামী করে ২৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় ৪ আসামী রুবেল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, আনারুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে।