ঈশ্বরদীর সেই ‘ক্ষুদে বিজ্ঞানী’ তারিফের প্রাণ কেড়ে নিল ট্রাক

আপডেট: মে ৮, ২০২৪, ৮:১২ অপরাহ্ণ


ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:


২০২১ সালের জুন মাসে যখন সারা বিশ্ব করোনা মহামারিতে টালমাটাল তখন বাতাস থেকে অক্সিজেন জেনারেটর ও কনসেন্টেটর তৈরি করে সারা দেশে সাড়া ফেলেন মাত্র ১৯ বছর বয়সী ঈশ্বরদীর শিক্ষার্থী তাহের মাহমুদ তারিফ। তারিফ নিজের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে এর নামকরণ করেছিলেন ‘টিএলআর-সিভি-১৯’। সরকার তার এই উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দিয়ে স্বর্ণপদকও প্রদান করেছিল। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সেই ক্ষুদে বিজ্ঞানী তারিফের প্রাণ কেড়ে নিলো ট্রাক। মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের কালিকাপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত তারিফকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত খুদে বিজ্ঞানী তারিফ ঈশ্বরদী শহরের কলেজ রোডের মশুড়িয়াপাড়া বকুলের মোড় এলাকার মৃত আব্দুস ছালামের ছেলে।

উদিয়মান স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এই খুদে বিজ্ঞানী আগামী মাসে একটি বৈজ্ঞানিক মেলায় নতুন উদ্ভাবনীর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য সিএনজি যোগে মঙ্গলবার ঈশ্বরদী থেকে পাবনায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে পেছন থেকে ওই সিএনজিকে একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে আহত হন তারিফ। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাস জানান, তারিফ একজন উদীয়মান ক্ষুদে বিজ্ঞানী। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার খবর পেয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারিফ করোনাকালীন সময়ে দেশে অক্সিজেনের সংকট মুহূর্তে স্বল্প খরচে কৃত্রিম অক্সিজেন উৎপাদন যন্ত্র ‘অক্সিজেন কনসেনট্রেটর’ আবিষ্কার করে দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছিলেন। এই উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ খুদে উদ্ভাবক হিসেবে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে শেখ রাসেল স্বর্ণপদক অর্জন করেন। এছাড়াও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন উদ্ভাবন করেন তিনি। ২০২০-২০২৩ সাল পর্যন্ত তারিফ চারবার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন।

সুত্র মতে, তারিফ ঈশ্বরদী সরকারী সাঁড়া মাড়োয়ারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকাকালিন সময়ে করোনায় তার বাবাকে অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে দেখেন। একই সঙ্গে অক্সিজেনের অভাবে মানুষকে মৃত্যু-যন্ত্রণা ভোগ করতে দেখে তার মনকে নাড়া দেয়। অক্সিজেন’র অভাবে কাউকে যেন এভাবে মারা না যায় এই সংকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেন। নিজে উদ্ভাবন করেন অক্সিজেন জেনারেটর এবং কনসেনট্রেটর। যা সাধারণত প্রতি মিনিটে ২৫ লিটার বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করতো। অক্সিজেন জেনারেটর ও কনসেনট্রেটর বাতাসের ২১ শতাংশ অক্সিজেনকে প্রক্রিয়াজাত করে ৯৮ শতাংশে রূপান্তর করে। যন্ত্রটি এক টানা সাত ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহে সক্ষম। এরপর ১০ মিনিট বিরতি দিলে আবারও টানা সাত ঘণ্টা চলে।

বুধবার (৮ মে) ঈশ্বরদীতে তার জানাজা ও দাফনের সময় প্রচুর মানুষ অংশগ্রহণ করে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব এস এম রবিউল ইসলাম জানান, তাহের মাহমুদ তারিফ গত বছর ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। সে দেশের একজন উদীয়মান ও আগামী দিনের জন্য চরম সম্ভাবনাময়ী একজন আবিষ্কারক হিসেবে ইতোমধ্যে দেশজুড়ে আলোচিত হয়ে উঠেছিল। তার মৃত্যুতে দেশ আবিষ্কার জগতের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারালো। তার বেশ কিছু আবিষ্কার আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version