শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় প্রতিবছরের মত এবারো ঈশ্বরদীতে পূজামন্ডপ ও মন্দির ঘিরে অস্থায়ীভাবে কয়েক দিনের জন্য বসেছে খৈ, নাড়ু, চিড়া-মুড়ি-মুড়কি, জিলাপি ও খেলনাপাতির দোকান। বিভিন্ন মন্দির ও পূজামন্ডপের সামনে এসব অস্থায়ী দোকানে যেসব পন্য বিক্রি হচ্ছে তার দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুন। সোমবার (৭ অক্টোবর) ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
খেলনা ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার গত ৪০ বছর ধরে এই ব্যবসার সাঙ্গে জড়িত। তিনি বগুড়া জেলার ধুপচাঁচিয়া থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় ঈশ্বরদীতে আসেন। এবারো শহরের কলেজরোডে ঠাকুরবাড়ি মন্দিরের সামনে পসরা সাজিয়েছেন খেলনাপাতির। তিনি বলেন, এবার সব জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। আব্দুস সাত্তার বলেন, গত বছরে যে টমটম গাড়ি বিক্রি করতাম ১০ টাকায় এবার তা দ্বিগুন দামে ২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। একইভাবে পাখিগাড়ি গতবার ছিল ২০ টাকা এবার বিক্রি করতে হচ্ছে ৩৫ টাকায়, প্রতিটি বাঁশির দাম ছিল ১০ টাকা এবার সেটা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।
শ্রাবন কুমার নামের এক দোকানী বলেন আমরা দোকান বসিয়েছি মাত্র কয়েক দিনের জন্য। তিনিও বলেন, গতবারের তুলনায় সব জিনিসের দাম এবার দ্বিগুন। কলেজ রোডের সত্যনারায়ণ মন্দিরের পুরোহিত সুকুমার পান্ডে জানান, বিগত বছর গুলোতে তিথির সময় সকাল ৯ টা পর্যন্ত ছিল। কিন্তু এবার আমাদের পুজোয় তিথির সময় বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। ভোর থেকে সকাল ৭ টার মধ্যেই তিথির সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দর্শনার্থীর সংখ্যাও কমছে।
দুর্গোৎসব ঘিরে যেসব খাবার বিক্রি হয় তা তৈরীর সব উপকরনের দাম প্রায় দ্বিগুন হওয়ায় অন্য বছরের দুর্গাপূজার মত এবার এসব দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতার মনে নেই আগের সেই উদ্দীপনা। ফলে ঈশ্বরদীতে এবার শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দ ভাটা পড়েছে মুড়ি-মুড়কির দোকানেও। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ও মন্দির এলাকা ঘুরে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, শারদীয়া দুর্গাপূজাসহ আরও অনেক পূজা-পার্বণে রসনা বিলাসে শত বছর ধরেই নারকেলের নাড়ু যেমন প্রধান অনুসঙ্গ, তেমনি দুর্গোৎসবকে ঘিরে হিন্দু পরিবারে বিভিন্ন পদের নাড়ু, মুড়ি, মুড়কি, মোয়া, খই তৈরির ধুম পড়ে যায়। ঈশ্বরদী বাজারে এবার নাড়ু তৈরীর প্রধান উপাদ্য নারকেলের জোড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ গত বছরও ১৮০ টাকায় পাওয়া যেতো এক জোড়া নারকেল।
আর কদমা, ছাঁচসহ চিনি বা গুড়ের তৈরী বিভিন্ন মিস্টান্ন তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় চিনি, দুধ, তেলের দামও বেড়েছে ফলে এসব জিনিসও গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুন দামে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ঈশ্বরদীর শতবছরের প্রাচীন মন্দির মৌবাড়িয়া দুর্গামন্দিরের সামনের অস্থায়ী দোকানী রঞ্জন দাস জানান, গত বছর চিনির তৈরী কদমার দাম ছিল ১২০ টাকা কেজি। এবার সেই কদমা বিক্রি করতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে। একই ভাবে ১৪০ টাকার ছাঁচ ২১০ টাকা, চিনির খাগড়াই ১২০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা। ১৬০ টাকা কেজির ধানের খই বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজিতে। ১৬০ টাকা কেজি ভুট্টার খই বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। চাল-গুড়ের ঝুড়ি ভাজা ১৫০ টাকা কেজির স্থলে ২২০ টাকা, ১৫০ টাকা কেজির ঝুরি ২৩০ টাকা।
বাজারের পাইকারি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, চিনিসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে এসব জিনিসের দাম বেড়েছে। শহরের রেলগেট মাতৃমন্দিরের সামনের দোকানী মাসুম হোসেন জানান, আমি প্রতিবছরই ঈশ্বরদীতে পূজার সময় এই দোকানদারী করি। ৩০ বছরের ব্যবসা জীবনে এতো বেশি দামে কখনো এসব দ্রব্য বিক্রি করিনি।
তিনি বলেন, চিনির দাম এখন আগের চেয়ে কয়েকগুণ আবার তেলের দামও বেশি। খড়িসহ এসব তৈরীর সব উপকরনের দামও বাড়তি, তাই খরচ বেশি হচ্ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করলেও আগের মত লাভ হয় না। মাতৃমন্দিরের সামনে ছোট নাতনিকে নিয়ে এসব কিনতে এসেছিলেন মানসী সূত্রধর।
তিনি বলেন, যে টাকা নিয়ে এসব কেনার কথা ভেবে এসেছিলাম তার অর্ধেকও কিনতে পারিনি। নাতনির খেলনা কিনতে পারিনি, খেলনা কেনার জন্য পরে আবার আসতে হবে। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাস বলেন, বাড়তি দামে কোন দোকানী কিছু বিক্রি করলে আমাদের মনিটরিং টিম তা ধরে ফেলবে। তাকে জরিমানাও গুনতে হবে।