উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে শহিদ কামারুজ্জামান চত্বর ।। রাসিকের পরিচর্যার অভাব

আপডেট: জুলাই ২৫, ২০১৭, ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

আশরাফুল আরেফিন


শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর-সোনার দেশ

প্রথমে নাম ছিল গোরহাঙ্গা রেলগেট মোড়। তারপর ক্রমান্বয়ে নামকরণ হয় গুলশান মোড় ও বিন্দুর মোড়। এর মধ্যে কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। সঠিক স্থানের সঠিক নামকরণ করতে লেগেছে প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময়। এরপর বেশ কয়েক বছর আগে সেই মোড়ের নামকরণ করা হয় শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর। মাত্র কয়েক বছর আগে এই চত্বর নির্মাণ করা হয়।
সত্যিই রাজশাহী নগরবাসীকে মুগ্ধ করার মতো একটি প্রাণবন্ত জায়গা ছিল এই চত্বর। নামটাই স্মরণ করিয়ে দেয় রাজশাহীবাসীর শ্রদ্ধেয় শহিদ হেনা ভাইকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের সঠিক পরিচর্যার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরের ফোয়রা পানির সৌন্দর্য্য, লাল-নীল বাতি জ্বলা ও দৃষ্টিনন্দন উজ্জ্বলতার দৃশ্য।
চত্বরটি নির্মাণ করার পর রাতে স্মৃতি স্তম্ভের দুপাশে বাহারি রঙের ল্যাম্প জ্বলজ্বল করতো, ফোয়ারার পানি অনবরত পড়তে থাকতো। সন্ধ্যার পর চত্বরে বসলে লাল-নীল বাতি ও ফোয়ারার পানিতে রাজশাহী নগরীকে স্বপ্নময় মনে হতো। কামারুজ্জামান চত্বরে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নানা মানুষের সমাগমে সরগরম হয়ে থাকতো। যেন এটা একটা ভাললাগার মতো ঠিকানা। এর মধ্যে সারাদিন তরুণদের পদচারণায় ছিল বেশি। কিন্তু তা এখন আর নেই ?
রাসিকের তথ্য মতে জানা যায়, বর্তমান সময়ে রাসিকের পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে রেলগেট শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরসহ রাজশাহী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য, রাস্তার লাইট, নদীরপাড়ের বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরফলে নগরীর সৌন্দর্য্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।
তৎকালীন সময়ে সেখানে সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে আড্ডা জমতো কামারুজ্জামানের ইতিহাস ও আলোচনা নিয়ে। খাবারের মধ্যে হায়দারের বার্গার, শিক কাবাব পাওয়া যেতো। চা খেতে খেতে চোখে পড়ার মতো ছিল প্রিয় মানুষের ছবি সংবলিত শহিদ কামারুজ্জামান হেনার উজ্জ্বল স্মৃতিস্তম্ভের দিকে। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে দিনদিন চত্বরের সৌন্দর্য্য বিলীন হয়ে বসেছে। এখানেই শেষ নয়, রাত গভীর হলে এ চত্বর হয়ে উঠতো একটি জনবহুল পল্লিতে। অবসর সময় কাটানোর জন্য সব শ্রেণির মানুষ ভিড় বসিয়ে চুটিয়ে আড্ডা জমাতেন।
সেই চত্বর এখনো জনবহুল হয়, কিন্তু কামারুজ্জামান চত্বরের সেই উজ্জ্বলতা নিয়ে আর কথা বলে না কেউ। নগরবাসী শুধু একটাই আফসোস করেন, চত্বরটির প্রাণ হারিয়ে গেছে। ফোয়ারার পানি বন্ধ হয়ে গেছে, রাতে জ্বলে না কোন বাহারি রঙের লাল ও নীল বাতি। এই চত্বর দিয়েই নগরীর তিনটি জেলায় (চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নঁওগা ও নাটোর) যাওয়া আসার একমাত্র পথ। রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র কামারুজ্জামান চত্বর সম্পর্কে যে কাউকে আলোচনায় বসতে দেখা যেতো দীর্ঘক্ষণ সময়।
চত্বরের আশেপাশে বসে চলতো খবরাখবর আদান-প্রদান ও নানা গল্প। মাঝে মাঝে জড়ো হতে দেখা যেতো নবীন-প্রবীণ রাজনীতিকদেরও। তখন মনে হতো রাত কেবলই শুরু। রাজশাহীর ক্ষণজন্মা রাজনৈতিক বক্তিত্বদের মধ্যে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান হেনা অন্যতম। তিনি বেড়ে উঠেন এ শহরের ধূলিকণার আদর-সোহাগে। আবার তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন জন্মস্থান কাদিরগঞ্জের পারিবারিক কবরস্থানে।
শহিদ কামারুজ্জামান চত্বর উদ্বোধন সময়ে রাসিকের তৎকালীন সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, রাজশাহী নগরীকে একটি অত্যাধুনিক শহরে পরিণত করার জন্য সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভাই বিভিন্ন উন্নয়নমূখি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তারই অংশ হিসেবে শহিদ কামারুজ্জামান চত্বর নির্মাণ করার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা, নদীর পাড় ও বিনোদন কেন্দ্র আলোকসজ্জ্বায় সজ্জিত করেছিলেন। বর্তমান রাসিক-এর উদ্যোগহীনতার জন্য আজ কামারুজ্জামান চত্বর পরিচর্যাহীন হয়ে পড়েছে।
বাবু বলেন, এরপর খায়রুজ্জামান লিটন ভাই মেয়রের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর ১৯১৩ সালের ১৫ জুন থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করি। এই সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এসে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শহিদ কামারুজ্জামান চত্বরের উদ্বোধন করেন।
শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম রাজনৈতিক সহচর। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে ঘাতকের বুলেটে শহিদ হন তিনি। তারই যোগ্য উত্তরসূরি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তারই উদ্যোগে ২০১০ সালের ৩ নভেম্বর এএইচ কামারুজ্জানের স্মৃতিস্তম্ভ রাজশাহী নগরীতে নির্মিত হয়। এর আগে স্মৃতিস্তম্ভের ফলক উম্মোচন করেন শহিদ কামারুজ্জানের সহধর্মিনী মরহুম জাহানারা জামান। এরপর ২০১৩ সালে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক তা উদ্বোধন করেন।
এবিষয়ে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর নির্মাণ করা হয়। প্রথম অবস্থায় সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে রাসিকের সঠিক পরিচর্যা ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ