এই সার্চ কমিটি কী কমিশন দেবে তা বোঝা যাচ্ছে: বিএনপি

আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০১৭, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্য বাছাইয়ে গঠিত সার্চ কমিটির গেজেট প্রকাশের আগে সংবাদমাধ্যমে আসা সম্ভাব্য সদস্যদের নাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, এই সার্চ কমিটি হয়েছে ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দের’ ব্যক্তিদের নিয়ে, কারণ পিএসপি চেয়ারম্যান, মহা হিসাব নিরীক্ষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসিকে সরকারই নিয়োগ দিয়েছে।
“নিরপেক্ষতার চরম যে নির্দশন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে সেটা দিয়েছেন। আমরা শুধু হতাশ হইনি, আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। এই সার্চ কমিটি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, তা এখনই বুঝতে পারছি।”
এই সার্চ কমিটি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে কিনা- সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ফখরুল।
“আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিক সংকট নিরসন যদি না করা যায়, তাহলে মানুষকে প্রতারণা করে, বোকা বানিয়ে এই ধরনের সার্চ কমিটি করে, যে সার্চ কমিটি গঠনের সঙ্গে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন নেই, সেখানে এটা কোনো দিন তার কাজ করতে সক্ষম হবে না।”
বুধবার সকালে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে চিঠি পাওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সার সংক্ষেপ তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পর সার্চ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিকাল পর্যন্ত কারও নাম না জানালেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির নাম এসেছে।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবারও সার্চ কমিটির প্রধান হচ্ছেন। হাই কোর্ট থেকে সদস্য হিসেবে আসছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এছাড়া সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য শিরীণ আখতার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের নাম এসেছে সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে।
এই কমিটি যাদের নাম প্রস্তাব করবে, তাদের মধ্েয থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্েযর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আর পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হবে সেই নতুন কমিশনের তত্ত্বাবধানে।
২০১২ সালে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সার্চ কমিটি য্বে নাম প্রস্তাব করেছিল, তাদের মধ্যে থেকে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন তখনকার রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান।
কাজী রকিবের কমিশনের তীব্র সমালোচনা করে আসা বিএনপি এবার রাষ্ট্রপতির সংলাপে নতুন নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লেবার পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা দেয়ার সময় ফখরুল একটি টেলিভিশনে প্রচারিত অধ্যাপক শিরীণ আখতারের দেয়া প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরেন।
“টিভি চ্যানেল টেলিফোনে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেছেন, আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পবিত্র দায়িত্ব মনে করি। এখন বঙ্গবন্ধুর আর্দশে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যে দায়িত্ব দেবেন, তাকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করে তা পালনে সচেষ্ট হব? বোঝেন, কী নিরপেক্ষ একটি সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে!”
বিএনপি মহাসচিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে মনে করি যে, তিনি হচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান এই রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অভিভাবক। তার কাছে আমরা সব সময় আশা করি, প্রত্যাশা করি, আমরা একটা নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত পাব। দুর্ভাগ্য আমাদের, দুর্ভাগ্য এই জাতির, যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, এই রাজনৈতিক সংকট থেকে জাতিকে বের করার আনার, সেই সুযোগটিও তিনি গ্রহণ করলেন না।” এর মধ্য দিয়ে জাতিকে ‘আবার একটি অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার দিকে’ ঠেলে দেয়া হল বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “এই সরকার আসার পর থেকে একবারের জন্যও সরকারের দিক থেকে কোনো রকমের উদ্যোগ আমরা দেখলাম না। বলতে দ্বিধা নেই, সরকার চায়, এই ধরনের পরিস্থিতিই বিরাজ করুন, এই অস্থিতিশীলতাই থাকুক, এই পানি ঘোলাটে হতে থাকুক।
“আর এই ঘোলাটে পানির মধ্য থেকেই চমৎকার করে মাছ শিকার করবেন। অর্থাৎ ক্ষমতায় যাবেন, আর সেই ক্ষমতা তারা দখল করে থাকবেন।”
‘বহুদলীয় গণতন্ত্র-শহীদ জিয়া-আজকের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান।
দলের মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদির পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বিএনাপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির ফারুক রহমান, শামসুদ্দিন পারভেজ, রামকৃষ্ণ সাহা, মাহমুদ খান, অধ্যাপক মহসিন মিয়া বক্তব্য দেন।- বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ