চাঁদাবাজি, মাদক ও আটক বাণিজ্যের অভিযোগে গোদাগাড়ী থেকে ১০ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড

আপডেট: মে ৭, ২০২৪, ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি:


চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত এক মাদকসম্রাটকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে গোদাগাড়ী থানা পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাসহ মোট ছয়জনকে লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। অন্যদিকে এক কিশোরকে তুলে নিয়ে মাদক দিয়ে চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দাবির ঘটনায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়ির চার সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে পৃথক ঘটনায় গোদাগাড়ী থানা ও অধীনস্ত প্রেমতলী ফাঁড়ি হতে মোট ১০ জন পুলিশকে ক্লোজড করা হয়।

জানা গেছে, মাদকের সাথে জড়িত ও আটক বাণিজ্যর অভিযোগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানার ছয় পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। সোমবার (৬ মে) জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ৫ জন কর্মকর্তা ও ১জন কনেস্টবলকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। ক্লোজড হয়া পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকরামুজ্জামান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) সত্যব্রত, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মঞ্জুরুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল করিম ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রঞ্জু এবং কনেস্টবল মাহবুব।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রোববার (৫ মে) বিকালে পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান (পিপিএম) গোদাগাড়ী মডেল থানা পরিদর্শনে এসে ক্লোজড হওয়া পুলিশ সদস্যদের অপরাধ সম্পর্কে অবহিত হন। এরপর ফিরে গিয়ে ৬জন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। গোদাগাড়ী মডেল অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মতিন বলেন, ৬জন পুলিশ সদস্যকে রাতেই থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া ৬জন পুলিশ সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের মাসোয়াহারা নিয়ে সহযোগিতা আটক করে মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগ আছে পুলিশ সুপারের কাছে বলে পুলিশ একটি সূত্র জানায়।

রোববার (৫ মে) সকালের দিকে আব্দুস সামাদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের বাদেফুল ইমলামের ছেলে নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ৩ লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় এসআই আকরামুজ্জামান। আব্দুস সামাদের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

অন্যদিকে এক কিশোরকে তুলে নিয়ে মাদক দিয়ে চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দাবির ঘটনায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়ির চার সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন— প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ারুল ইসলাম, কনস্টেবল রেজাউল ইসলাম ও মিলন হোসেন। রোববার বিকালে তাদের প্রত্যাহারের আদেশ দেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, শনিবার রাত আনুমানিক ৮.৩০টায় গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের গোগ্রাম হতে কিশোর সোহানুর রহমান সোহানকে (২১) সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যায় প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ৪ পুলিশ সদস্য। সোহান গোগ্রাম এলাকার ব্যবসায়ী মর্তুজা আলীর ছেলে। অভিযোগ মতে, এ পুলিশ দলের নেতৃত্বে ছিলেন এসআই রেজাউল করিম। পুলিশ সদস্যরা সোহানকে গোগ্রাম থেকে তুলে প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পেছনে পদ্মা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। আইপিএল জুয়ায় বিপুল টাকা কামানোর অভিযোগ এনে ছেলেকে ছাড়াতে সোহানের বাবার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ। টাকা না দিলে হেরোইনের মামলা দিয়ে চালান করার ভয় দেখানো হয়। সোহানের হাতে পরানো হয় হাতকড়া।

এদিকে পুলিশ দলের সদস্যরা সোহানকে পদ্মার ধারে আটকে রেখে এএসআই আনোয়ারুল ইসলাম টাকা নিতে গোগ্রাম চলে যান সোহানের বাবার কাছে। এ সময় গ্রামবাসী একজোট হয়ে আনোয়ারুল ইসলামকে আটক করে সোহানকে ফেরত দেওয়ার দাবি করেন। খবর পেয়ে বাকি তিন পুলিশ সদস্য রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে সোহানকে বসন্তপুরের একটি ফাঁকা সড়কে ছেড়ে দিয়ে যায়। সোহান তার পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বললে আটক পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলামকে ছেড়ে দেয়া হয়। ছাড়া পাওয়ার পর সোহান জানায়, তাকে ছেড়ে দেওয়ার আগে পুলিশ সদস্যরা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বিকাশের পিন দিয়ে কয়েক হাজার টাকা তুলে নেয়।

এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাটি তদন্ত করেন গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানা। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রোববার রাতে ৪ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করার নির্দেশ দেন রাজশাহীর পুলিশ-সুপার মো. সাইফুর রহমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্রের চার পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, গোদাগাড়ী থানায় পোস্টিং পাওয়ার পর থেকে এসব পুলিশ সদস্য ধরাছাড়া বাণিজ্য করে আসছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান জানান, শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version