চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান কেনাবেচা না হওয়ায় চাষী ও ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

আপডেট: মে ৭, ২০২৪, ৮:২৬ অপরাহ্ণ


শিবগঞ্জ(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)সংবাদদাতা:


আমের রাজধানী নামে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। শুরু থেকে আমের প্রতিকুল অবস্থা ছিল। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য মতে এবার জেলায় আমের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু নানা প্রতিকুলতার মাঝে আমের উৎপাদন প্রায় অর্ধেকের বেশি নিচে নেমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারপর আবার দীর্ঘদিন যাবত প্রচণ্ড তাপদাহ চলায় গুটি ঝরে পড়েছে। যা সামান্য আম আছে তাও আবার কেনাবেচা না হওয়ায় আমচাষী ও আম ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত উঠেছে। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষি আরিফুল ইসলাম (৫০) বলেন, ২৫ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মৌসুমে গাছে আম ধরলে অগ্রিম বাগান বিক্রি করেন অন্য ক্রেতাদের কাছে। কিন্তু এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা।

দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও বাগান বিক্রি করতে পারছেন না তিনি। কারণ বাগানে আসেনি আশানুরূপ আমের গুটি। এতে হতাশায় দিন কাটছে তার। শুধু আরিফুল ইসলাম নয় জেলার অধিকাংশ আমচাষির অবস্থা এমন। আরিফুল ইসলাম বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে আম ব্যবসা করে আসছি। প্রতিবছর গাছে আম ধনলে এসময়ে বাগান বিক্রি করি। কিন্তু এবার গাছে নেই পর্যাপ্ত আমের গুটি। তাই ক্রেতাও নেই। আর এবার বেড়েছে কীটনাশক-বালাইনাশক খরচ। আম যদি না হয় এসব কৃষি পণ্যের টাকা আমি দিব কোথায় থেকে। এমনকি যে শ্রমিক আমরা আগে পেতাম ৩০০ টাকায়, এখন শ্রমিকের মজুরি ৫০০/ ৬০০ টাকা। এতে গত বছরগুলোর চেয়ে এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। তিনি বলেন, প্রথা হিসাবে বছরে দুইবার আম গাছ বিক্রি হয় একবার গাছে আম ধরার পর।

অন্যবার পাতাতে। কিন্তু এখন আর কোনটিই হচ্ছে না। পুকুরিয়া এলাকার আমচাষি সুজা মিয়া বলেন, আমার খিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনাসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় সাতবিঘা জমিতে আমবাগান রয়েছে। প্রতিবছর আম ফলিয়ে গাছেই বিক্রি করি। কিন্তু এবার বাগানে নেই পর্যাপ্ত আম। এতে দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও পাচ্ছি না ক্রেতা। কানসাট আব্বাস বাজার এলাকার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, জন্মসূত্রে ১৫ বিঘা আমবাগান পেয়েছেন। একটি মাত্র সন্তান বিদেশে থাকে। এজন্য শ্রমিকদের দিয়ে গাছে আম ধরলে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু এবার ক্রেতা পাচ্ছেন না তিনি। এতে অযত্নে পড়ে আছে তার ১৫ বিঘা আমবাগান।

শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের আমবাগান মালিক রাকিমুল ইসলাম বলেন, চাকরির সুবাদে আমরা পরিবার নিয়ে এক যুগ ধরে রাজশাহীতে বসবাস করি। জন্মসূত্রে পাওয়া এলাকায় ১০ বিঘার বেশি জমিতে আমবাগান রয়েছে। এ আমগাছগুলোতে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচর্যা কতে আম ধরিয়ে এসময় বিক্রি করি। আমাদের বাড়িতে ক্রেতারা এসে কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এবার কোনো ক্রেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। শুনছি বাগানে নাকি আম নেই। শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাগানে কম মুকুল এসেছিল। আর ফুটন্ত মুকুলের সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। এতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জেলায় এবার ৭০ শতাংশ গাছেই আম নেই। এজন্য ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সহ জেলার শত শত আম চাষীদের দাবী তাদের প্রণোদনার আওতায় আনা হোক। তাহলে কিছুটা রক্ষা পাবো আমরা। তারা আরো বলেন বর্তমান সরকার কৃষি ক্ষেত্রে অনেক প্রণোদনা দিলেও আম চাষীদের এখনো কোন প্রণোদনা দেয়া হয়নি। প্রণোদনন না পেলে আম ব্যবসায়ীয় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, এবার যে প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে আমের কিছুট ক্ষতি হয়েছে। সামনে আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে। যেমন কাল বৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি এসব হতে পারে। এমনটা হলে আমের উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে। তিনি বলেন এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা আমচাষীদের বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। তাই চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে আগের পুরনো জাতগুলো পরিবর্তন করে নতুন জাতে রূপান্তরিত করার। কারণ আমরা কয়েক বছর থেকেই দেখছি আগের বড় গাছগুলোতে আম না হলেও নাবি জাতের ছোট গাছগুলোতে আম আসছে। তিনি আরো বলেন এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। অনেকের ধারণা অনেক আম গাছ কাটা হয়েছে ফলে আমের বাগানের পরিমাণ কমে গেছে। তবে এ ধারণা ভুল ্ কারণ কেউ কেউ পুরাতন গাছ কেটে ফেললে সংগে সংগে নতুন জাতের আম গাছ লাগিয়ে তা পূরণ করছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version