চিকিৎসার নামে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ।। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক

আপডেট: নভেম্বর ২৭, ২০১৬, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ

দেশে চিকিৎসাসেবা ক্ষেত্রে এক ধরনের নৈরাজ্য আছে। এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। এই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে বা নিরসনে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। ফলে মানুষের চিকিৎসাসেবার মত খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা, প্রতরণা করে তার সর্বস্ব লুটে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই প্রতারণার জাল বিস্তারে একশ্রেণির সনদধারী চিকিৎসক যেমন আছেন তেমনি হাতুড়ে চিকিৎসকরাও আছেন। মানুষ মাত্রই তাঁর প্রিয় স্বজনকে প্রয়োজনে সর্বস্ব বিক্রি করে হলেও সুস্থ করতে চান, এখানে কোনো আপোষের জায়গা নেইÑ মানুষের দুর্বলতার এই জায়গাটিকেই সেই চিকিৎসকেরা জিম্মি করেনÑ যা অত্যন্ত অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ।
দেশের গ্রামে-গঞ্জে কবিরাজ নামের একশ্রেণির চিকিৎসক আছেন, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ নানাভাবে প্রতারিত হয়। অর্থ খুইয়ে সর্বস্বান্ত হয়, আবার শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকারও হয়।  তেমনি এক ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক সোনার দেশে। নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নের চান্দাই গ্রামের ওই ঘটনা ঘটেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মতে জানা যায়, আকিল আহম্মেদ নামে এক কবিরাজের বিরুদ্ধে চিকিৎসার নামে একাধিক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা প্রকাশের পর ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই কবিরাজের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
কবিরাজ আকিল ওই গ্রামের আবদুল বারী সরদার ঝুলনের ছেলে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে একই গ্রামের ডিস ব্যবসায়ী রঞ্জু ও গৃহবধূ তাসলিমার নামে। এলাকাবাসীর তোপের মুখে রঞ্জু ও তাসলিমাসহ ওই কবিরাজ গা ঢাকা দিয়েছেন। এদিকে লজ্জায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না নির্যাতিতা স্কুলছাত্রীসহ তাদের পরিবার। ঘটনার জানাজানি হওয়ার পর থেকে এলাকার অনেক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ছাত্রীরা লজ্জা ও আতঙ্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রবাসি আকিল আহম্মেদ প্রায় দুই বছর আগে পাকিস্তান থেকে ফেরত এসে এলাকয় নিজেকে কবিরাজ হিসাবে প্রচার করে নানা টোটকা চিকিৎসা শুরু করেন। এরই এক ফাঁকে প্রতিবেশী দরিদ্র পরিবারে কয়েকজন স্কুলছাত্রীর চিকিৎসার নামে যৌন নির্যাতন করে তা ভিডিও ধারণ করে রাখে। বিষয়টি কাউকে না জানানের জন্য প্রাণনাশের এবং ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেয়। এরই একপর্যায় কবিরাজির মাধ্যমে স্থানীয় উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর প্রেমিকের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়ার কথা বলে তাকে নিজ ঘরে ডেকে নিয়ে যৌন নির্যাতন চালায়। এবং সেটার ভিডিও ধারণ করে। পরে তাকে ওই ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন যৌন নির্যাতন করতে থাকে।
ভয়ঙ্কর প্রতারণামূলক এই ঘটনা। স্কুল ছাত্রীদের সহজ-সরল ভাললাগার অনুভুতিকে জিম্মি করে কী ভয়ঙ্কর সর্বনাশের পথ বেছে নিয়েছে ওই ভ- কবিরাজ। এমন কবিরাজের সংখ্যা এ দেশে নেহাতই কম নেই। সাধারণ মানুষের সাথে খুবই ওতপ্রোতভাবেভাবে সম্পর্কে থেকেই তারা এ ধরনের জালিয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। ঘটনা প্রকাশ পেলেই কেবল তা সাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। কিন্তু তার পূর্বে ওই ভ- কবিরাজরা মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার আসন লাভ করে প্রতারণামূলক কাজ চালিয়ে যায়। প্রশাসনের লোকজন কিংবা গ্রামের নেতৃস্থানীয়রা কখনই তার কর্মকা-ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে না। ফলে তাদের প্রতারণা চালিয়ে যেতে কোনোই অনুবিধে হয় না। তবে এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলার সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। একই সাথে কোনো ধরনের স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত সনদ ছাড়া সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করা প্রয়োজন।
নাটোরের বড়াইগ্রামের ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ