ছন্দে ফিরছে রাজশাহী

আপডেট: জুলাই ২৫, ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) থেকে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মোবাইল ইন্টারনেটও শিগগিরই চালুর প্রতিশ্রুতি সরকারের। শিথিল হয়েছে কারফিউ। এতে দূর্যোগ-দুর্ভোগ কাটিয়ে ছন্দে ফিরতে শুরু করছে রাজশাহী।

রাজশাহীতে তেমন কোনো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলেও কারফিউয়ের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে সবকিছু। সহিংসতা রুখতে সরকারের কারফিউ ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের পর নগরীজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা বিদ্যমান। বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে কারফিউ শিথিল হওয়ায় সকাল থেকেই মানুষ বাইরে বের হয়েছে। তবে এখনো উদ্বেগ ও উৎকণ্টা রয়েছে নগরবাসীর মধ্যে।

বুধবার কারফিউ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দীর্ঘ সপ্তাহখানেক পর দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। বেচাকেনাও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। রাস্তাতেও মানুষের চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক ছিলো। নগরীর সাহেব বাজার, কোর্ট বাজার, ভদ্রা এলাকায় প্রচুর মানুষের সমাগম ছিলো। অফিস-আদালত ও ব্যাংকেও মানুষের উপস্থিতি ছিলো প্রচুর।

কৃষি:
কৃষি নির্ভর রাজশাহীর জীবনযাত্রা ও উন্নয়ন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাজশাহীর কৃষি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য, মৎস্য ও পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক লোকসানের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষিরা। শেষ সময়ে এসে গাছেই নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ আম। যা এখন স্বাভাবিকে ফেরতে শুরু করছে।

চাষিরা বলছেন, শেষ সময়ে তারা যে লাভের আশা করছিলো সেটা সম্ভব হয় নি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকার কারণে। অনেকেরই গাছে নষ্ট হয়েছে ফজলি আম। আবার গাছে আম পেকে নষ্ট হওয়ায় অনেকে স্থানীয় বাজারে নামমাত্র দামেও পাকা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন।

রাজশাহীর পবা এলাকার আমচাষি জিয়াউর রহমান বলেন, শেষ সময়ে ফজলি এবং আম্রপালি আমের দামটা ভালো পাওয়া গেলো না। এই সপ্তাহখানেক ধরে অনেক ক্ষতি হলো।
রাজশাহীর শালবাগান এলাকার আম ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন আমের বিদায় বেলা। গাছে ফজলি আম এখন প্রায় শেষ। কিছু গাছে আম্রপালি আছে। আর এরপরে আশ্বিনা পাকলে আম মৌসুম এবারের মত বিদায়। ৪/৫দিন ধরে ব্যবসা নেই। অনেক গাছেই আম পেকে পড়ে নষ্ট হয়েছে। কারণ মানুষ বাইরে বের হতে পারে নি। সেখানে কিভাবে আম কিনবে। রাজশাহী থেকে প্রতিদিনই কুরিয়ার এবং ট্রাক যোগে বিপুল পরিমাণ আম দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এগুলো কয়েকদিন ধরে বন্ধ ছিলো। আশা করছি, খুব শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

রাজশাহী ফ্রুটস প্রডিউসর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, আম পেকে গেলে আর ধরে রাখার সুযোগ নাই। গত সপ্তাহখানেক ধরে পেকে গিয়ে নষ্ট হয়েছে অনেক আম। এবার আমের উৎপাদন কম ছিলো। কিন্তু যেভাবে ক্রয় বিক্রয় ও বাজারজাত হচ্ছিলো সেভাবে শেষ করতে পারলে চাষিরা খুশি হতো। কিন্তু শেষ সময়ে এসে ঝমেলাটা বেধে গেলো। এখনো যাদের গাছে আম রয়েছে তারা চরম উৎকণ্ঠায় আছেন।

অর্থনীতি:
ছোট্ট এ নগরী ‘শিক্ষা নগরী’ হিসেবেই পরিচিত। নগরবাসীর জীবনযাত্রা ও ব্যবসা বাণিজ্যও তাই অনেকটাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিকতার উপর নির্ভর করে। এই শিক্ষার্থীদের উপর নির্ভর করেই অনেকের সংসার চলে। চলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। হঠাৎই এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নগরীর ছোট ছোট দোকানি থেকে শুরু করে সকল ব্যবসায়ীরাই বিপাকে পড়েছেন। কারণ তাদের সিংহভাগ ক্রেতাই এখন শহরে নেই।

এছাড়া নগরীতে ১৫ হাজারের বেশি পরিবার চলে অটো রিকশা ও চার্জার অটো রিকশার উপর নির্ভর করে। গত সপ্তাহখানেক ধরে সেটিও ছিলো বন্ধ। যা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করায় নগরবাসীর জীবনযাত্রাও ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে। এছাড়া দূর পাল্লার যান চলাচলও স্বাভাবিক হতে শুরু করছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ফিরে না আসা পর্যন্ত পুরোপুরোভাবে স্বাভাবিক হবে না রাজশাহীর অর্থনীতি।

রাজশাহী শ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির অবস্থা অনেকটাই টালমাটাল। আর রাজশাহী হলো শিক্ষা নগরী। এখানকার অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্যের একটা বড় অংশ শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে। এখানে বড় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। শিক্ষা কেন্দ্রীক অর্থনীতি হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ ক্লাসে স্বাভাবিকভাবে ফিরতে পারবে না, ততক্ষণ অর্থনীতির গতি ফিরবে না। তবে যেহেতু কারফিউ শিথিল হয়েছে একারণে ছন্দে ফিরতে শুরু করছে জীবনযাত্রা।

নিরাপত্তা:
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) মুখপাত্র মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের রাজশাহীর পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক আছে। আবারও স্বাভাবিকতা ফিরতে আনতে পুলিশ সর্বাত্মকভাবে কাজ করছে। কোনো ধরনের সহিংসতা ঘটনা যেন না ঘটে, সে লক্ষ্যেও পুলিশ সচেষ্ট আছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ