জাতির গৌরবে দীপ্যমান ডিসেম্বর মাস

আপডেট: ডিসেম্বর ১, ২০২৩, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


ডিসেম্বর মাস। বাঙালি জাতির মহান গৌরবের বিজয়ের মাস। বাঙালি জাতি একটি অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জন করে এই বিজয়। অধিকাংশ জাতিরাষ্ট্রের ‘বিজয়’-এর গৌরবোজ্জ্বল কোনো দিবস নাই। ১৯৭১ সালে জনযুদ্ধের মাধ্যমে অনন্য এই গৌরব অর্জন করে বাঙালি জাতি। এ গৌরব বীরত্বের, এ গৌরব দেশ-মাতৃকার জন্য, অকাতরে জীবন দানের, এ গৌরব আবেগ ও ভালবাসার। গৌরবের মাস উদযাপনে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।

১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বিজয়ের এ পথ-পরিক্রমা যেমন রক্তাক্ত ছিল, তেমনি বিশ্ব মানচিত্রে আলাদা একটি অবস্থান তৈরিও সহজ ছিল না। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জাতিকে একটি জনযুদ্ধের সূচনা করতে হয়েছে। অনেক মূল্য দিয়ে প্রিয় স্বাধীনতাকে অর্জন করতে হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতীয় জীবনে তো বটেই তৎকালীন বিশ্ব প্রেক্ষাপটেই একটি তাৎপর্যময় ঘটনা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতি সংগ্রামে-ঐতিহ্যে বিশ্ব দরবারে আজ দীপ্যমান। মুক্তিযুদ্ধ যুগ যুগ ধরে জাতিকে সাহস যোগাবে, ন্যায়-সঙ্গত প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে দেশ জাতি নির্বিশেষে সকলকে অনুপ্রাণিত করবে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির রাজনৈতিক স্বাধীনতার, সাংস্কৃতিক স্বকীয়তার এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের সুদীর্ঘ সংগ্রামের সূচনাপর্ব। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। আর এই জাতীয়তাবাদী চেতনা ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ’৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফার আন্দোলন, ৬৯-এর ১১ দফার আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে প্রথমে স্বাধিকারের সংগ্রাম এবং পরে ১৯৭১ সালে চূড়ান্ত স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের দিন পরিক্রমায় গৌরবের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।

১ ডিসেম্বর ১৯৭১ : মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক আক্রমণ
১৯৭১ সালের এইদিনে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকসেনারা পদে পদে মার খায়। সিলেটের কানাইঘাটে লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৩০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। জুড়ি, বড়লেখা এলাকা থেকে পাকবাহিনী কামান সরিয়ে ফেলে। আর মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকসেনারা অশংঙ্খ ক্ষতির শিকার হয়ে কুলাউড়া পালিয়ে যায়।

এদিন মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়ার দর্শনা ও সিলেটের শমসের নগর আক্রমণ করে। কুষ্টিয়ার কাছে মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের মধ্যে মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাক সৈন্যবাহী ট্রেন বিধ্বস্ত করে। এতে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। সিলেটের ছাতক শহরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৬৫ জন রাজাকার নিহত হয়। আর মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার মুক্ত করে সামনে এগিয়ে যায়। কুমিল্লার কসবা রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৬০ জনের বেশি পাকসেনা নিহত হয়।

সিলেটের শমসের নগর ও কুষ্টিয়ার দর্শনা দখল লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে। এদিন রাতে কর্নেল শফিউল্লাহ, ২য় বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর মঈন, ১১ বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর নাসিমের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেরানী, সিঙ্গারাইল, গৈরালসানী, রাজাপুর ও আজমপুর এলাকা শত্রুমুক্ত করে। যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন খাঁ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শহিদ হন। আর ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

সাতক্ষীরা মহকুমার কালিগঞ্জ পাকবাহিনী মুক্ত হওয়ায় বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান, শ্রী ফণি মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ এমএনএ, অর্থসচিব এ জামান, আইজি এমএ খালেক কালিগঞ্জে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী পশ্চিম ফ্রন্টে আক্রমণাত্মক ও পূর্ব ফ্রন্টে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশকে হানাদার বাহিনীমুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্যসভায় বক্তৃতাকালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণের নির্দেশ দেয়ার জন্য পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী ও যশোর জেলার ৬২টি থানা এবং নোয়াখালী জেলার সব-চর এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ