রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
একাত্তরে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত’ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকা-’ চালানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী জামায়াত এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২৯ জুলাই থেকে জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বিষয়টি সারা দেশ জুড়ে আলোচনায় আসে। দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি দেড় দশক ধরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো করে আসছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর শেষাবধি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হলো। দলটিকে নিষিদ্ধ করার পর ভিন্নমত বিচ্ছিন্নভাবে আসলেও নিষিদ্ধের পক্ষেই অধিক মানুষ সমর্থন জানাচ্ছেন।
তবে এবারই জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হলো তা নয়- এর আগেও দলটি তিনবার নিষিদ্ধ হয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের বিরোধিতাকারী দলটি প্রথম নিষিদ্ধ হয় ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের আমরে। এর পর ১৯৬৪ সালে দ্বিতীয়বারের মত দলটি নিষিদ্ধ হয়। মুসলিম পারিবারিক আইন নিয়ে তুমুল সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতাও তৈরি হয় ওই সময়। সেজন্য জামায়াতকেই দায়ী তরা হয়ে থাকে।
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই শুধু নয়, এ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বর্বর সেনবাহিনির সাথে যুদ্ধে নামে। দেশ জুড়ে গণহত্যা-খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায জামায়াতে ইসলামী সহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মিরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা জামায়াতে ইসলামীকে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়। ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে ধর্ম নিয়ে রাজনীতিই নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু পঁচাত্তরের মর্মান্তিক পটপরিবর্তনের পর ১৯৭৯ সালে জামায়াতে ইসলামী স্বরূপে রাজনীতি করার সুযোগ লাভ করে। যা ছিল বাঙালি জাতির দীর্ঘ-লড়াই-সংগ্রাম ও একাত্তরে জনযুদ্ধের মূল চেতনার বিরুদ্ধে ছিল। তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ধর্মীয় রাজনীতির গোড়াপত্তন করেন। একই সাথে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রীয় আনুকুল্য লাভ করতে থাকে। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পর্যায়ক্রমে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা মৃত্যুদ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-প্রাপ্ত হয়। তাদের অনেকেরই শাস্তি কার্যকর হয়। জামায়াত অনেকটাই নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। তারপরে দলটি তাদের চিরাচরিত সন্ত্রাস ও তা-বের রাজনীতি থেকে কখনই সরে আসেনি। ফলে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা সবসমই চ্যালেঞ্জ ছিল। জামায়াতে ইসলামী সর্বশেষ নিষিদ্ধ করার পর সেই চ্যালেঞ্জের অবসান হবে কি? খুব শিগগিরই সেটা সম্ভব হবে না। রাষ্ট্রের চরিত্রের ওপরই নির্ভর করবে এই বিষয়টির মীমাংসা। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সমর্থনে সামাজিক জাগরণ সৃষ্টির জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন হবে। সেটাও একটি আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে।