জেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমি উদ্যোগ নওগাঁয় ন্যায্যমূল্যের দোকানে মিলছে স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস

আপডেট: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:


নওগাঁ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হওয়া ন্যায্যমূল্যের দোকানগুলোয় বাজারের তুলনায় স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে। এই দোকানে ৯০-১০০ টাকা কম মূল্যে মাংস পেয়ে খুশি স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শুধুমাত্র নওগাঁতেই চালু করা হয়েছে এই ন্যায্যমূল্যের দোকান। ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে পুরো দেশে এমন ব্যতিক্রমি উদ্যোগ মডেল হিসেবে মূল্যায়িত হবে বলে মনে করছেন নওগাঁর সচেতন মহল।

বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের এমন উর্দ্ধগতির বাজারে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের ভোক্তাদের স্বল্পমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রাপ্যতার কথা চিন্তা করে গত ২৩ নভেম্বর থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের নির্দেশনায় জেলার ১১টি উপজেলায় প্রশাসনের পরিচালনায় চালু করা হয়েছে ন্যায্যমূল্যের দোকান। যে দোকানে বাজারের তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যে আলু, পেঁয়াজ এবং ডিম পাওয়া যাচ্ছে। দোকানগুলোয় বর্তমানে নতুন আলু ও পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি এবং ডিম ৪৫ টাকা হালিতে পাওয়া যাচ্ছে।

এই দোকান থেকে একজন ক্রেতা দুই হালি ডিম এবং দুই কেজি করে আলু, পেঁয়াজ ও মাংস কিনতে পারবেন। বাজার মূল্য থেকে কিছুটা কম দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন সকল শ্রেণির ভোক্তা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ন্যায্যমূল্যের এই দোকান।

শুক্রবার থেকে সেই দোকানগুলোর পণ্যের তালিকায় নতুন পণ্য হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস। এক ভোক্তা প্রতি শুক্রবার ন্যায্যমূল্যের এই দোকান থেকে স্বল্পমূল্যে দুই কেজি গরুর মাংস সংগ্রহ করতে পারবেন।

বর্তমানে খোলা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০-৭৫০ টাকা। ফলে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে গরুর মাংস এখন অনেকটাই ডুমুরের ফুলের মতো দুষ্প্রাপ্য বস্তু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

এমতাবস্থায় মাসে অন্তত একবার এই সব মানুষদের খাবারের তালিকায় গরুর মাংস সংযোজন করতে জেলা প্রশাসন স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস বিক্রির এমন ব্যতিক্রমীি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জেলার সদর, রাণীনগর, মান্দাসহ অন্যান্য উপজেলা পরিষদের ন্যায্যমূল্যে মাংস বিক্রির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

রাণীনগর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ন্যায্যমূল্যের দোকানে প্রায় দুই মণ ওজনের একটি গরু সকাল ৯টায় জবাই করা হয়। সাড়ে ১০টার মধ্যে মাংস কেটে সাইজ করা হয়। মাংসের দাম কম হওয়ার কথা শুনে ক্রেতারা ছুটে আসেন। আবার অনেকে দেখার জন্যও আসেন। মাংস নিতে ইচ্ছুক অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে তালিকায় নাম লেখান। ঘণ্টাব্যাপি সময়ের ব্যবধানে মাংস বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

উপজেলা সদরের রনসিংগা গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল জব্বার বলেন, বাজারে গরুর মাংসের যে দাম কিনতে না পারার কারণে সেই মাংসের স্বাদ ভুলেই গেছি। বর্তমানে বাজারে ৬৯০-৭০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে যা আমার মতো নিম্ন আয়ের মানুষের কিনে খাওয়া সম্ভব নয়।

আবার বাজারে কম পরিমাণ মাংসও বিক্রি হয় না। অথচ ন্যায্যমূল্যের দোকানে স্বল্প মূল্যে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস কেনা যাচ্ছে। এতে করে আমি পরিবারের সদস্যদের মাসে অন্তত একবার একবেলা গরুর মাংস খাওয়াতে পারবো। এমন দোকান চালু হওয়ায় আমি খুবই খুশি। এমন দোকান যেন কখনও বন্ধ না হয়। এখন থেকে আমিষের চাহিদা পূরণে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুবিধা হবে।

সদর উপজেলার চকমুক্তার মহল্লার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী সানাউল্লাহ বলেন, খুচরা বাজারে বরাবরই মাংসের দাম বেশি থাকে। মুরগি খাওয়া হলেও গরুর মাংস তেমন একটা কেনা হয় না। দাম কিছুটা কম পেয়ে এক কেজি কিনেছি। মাংস মোটামুটি ভাল। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য এমন উদ্যোগ অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম রবিন শীষ বলেন, ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু হওয়ার পর সুবিধা পাচ্ছেন উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। আলু, পেঁয়াজ ও ডিম এর সাথে গরুর মাংস যোগ করা হয়েছে। প্রতি শুক্রবার গরুর মাংস বিক্রি হবে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি এবং সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস কিনতে পারবেন। এক কথায় সকল আয়ের মানুষ তাদের সামর্থ্য অনুসারে গরুর মাংস এই দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের গ্রহণ করা এমন ব্যতিক্রমি উদ্যোগ এক সময় দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলে আশা করি। স্যারের প্রদান করা নির্দেশনাকে আমরা উপজেলা পর্যায়ে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে সুবিধা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছি মাত্র।

ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে সচেতনতামূলক কিছু বিষয়ও প্রচার করা হচ্ছে। পলেথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে বিকল্প হিসেবে কাপড়ের ব্যাগে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ চাইলেও পলেথিনে পণ্য বিক্রি করা হবে না। এমন কার্যক্রমের মাধ্যমে জেলার মানুষরা ব্যাপক ভাবে উপকৃত হচ্ছেন বলে তিনি মনে করেন।