সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
আফগানিস্তানে তালিবানরা ক্ষমতায় ফেরার সাড়ে ১৫ মাস পেরিয়ে গেল কিন্তু দেশটিতে কোনোভাবেই স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হয়নি। বরং দেশটি ক্রমশ ভয়াবহ সঙ্কটের ধাবিত হচ্ছে। ২০ বছর পর দলটি ক্ষমতায় আসার মুহূর্তে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা এখন পিছু হটেছে। দেশটিতে কট্টররূপে শারিয়া আইন বলবৎ করেছে। এমনিতেই যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত একটি দেশ, তদুপরি শারিয়া আইনের বাড়াবাড়ি প্রয়োগের ফলে দেশটির ঝুলে থাকা অর্থনীতি একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশটি এই মুহূর্তে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ দেশটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের তথ্য বলছে, আফগানিস্তানে খুব কম বয়সে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আফগান মেয়েদের। এর পিছনেও তালিবান আতঙ্ক কাজ করছে। সমাজকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীদের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে- এই বিয়ে দিয়ে দেয়ার পিছনে রয়েছে আফগান অভিভাবকদের ভয়। তাঁরা চাইছেন, কোনো তালিবান তাঁদের মেয়েদের জোর করে বিয়ে করার আগেই কোনো আফগানের সঙ্গে তাদের বিয়ে দিতে। এই কারণেই একেবারে নাবালিকা অবস্থাতেই আফগান মেয়েদের বিয়ের সংখ্যা বাড়ছে।
তাছাড়া বিয়ে দিয়ে দিলে পরিবারের সদস্যের সংখ্যাও কমবে। দারিদ্রের কবলে পড়ে হাঁসফাঁস সাধারণ আফগানদের কাছে সেটাও অনেকটা স্বস্তির। কিন্তু এর ফলে মেয়েদের শিক্ষা ও স্বাবলম্বী হওয়ার সম্ভাবনাও যে ক্রমে ক্ষীণ হচ্ছে সেবিষয়ে আর ভাবনাচিন্তা করছেন না তাঁরা। অবশ্য শারিয়া আইনের প্রয়োগের ফলে দেশটিতে মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার সুযোগও নেই। দেশটিতে মেয়েরা গৃহবন্দি। মানুষ হিসেবে তাদেও কোনো মর্যাদাই নেই। তালিবান সরকার কায়েমের পর দেশটির নারীরা চাকরি হারিয়েছে, ব্যবসা হারিয়েছেন। নারীরা ক্রীয়াশীল কোনো কাজেই আর নেই।
তালিবার সরকারের শাসন প্রক্রিয়ার মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছেÑ নৃশংসতা। ক্ষমতা দখলের পর থেকেই ধীরে ধীরে স্বমহিমায় ফিরেছে তারা। বিভিন্ন অপরাধে হাত-পা কেটে ফেলা, শিরñেদের মতো শাস্তির পক্ষে সওয়াল করেছে জেহাদি নেতৃত্ব। ভরা স্টেডিয়ামে বেত মারা হয়েছে পরকীয়া থেকে চুরি নানা অভিযোগে অভিযুক্তদের।
এখন দেশটি ক্ষুধা, দারিদ্র ও আতঙ্কের ঘুর্ণাবর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কন্যা শিশুদের বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে পরিবারের আর সদস্যদেন মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনযায়ী ক্ষুধার্ত শিশুদের খাদ্য দিতে না পেরে বাবা-মা তাদের ঘুমের বড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখছে। ১০ লাখেরও বেশি শিশু চরম খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে। বলা যায়, দেশটিতে মানবিক বিপর্যয় চলছে।
মানবতার প্রশ্ন যখন তখন বিশ্ব বিবেক চুপ কনে থাকতে পানে না। তালিবান শাসকদেন জন্য নয়Ñ দেশটির ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর জন্য মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন। জাতিসংঘ ও উন্নত বিশ্ব এ দায় এড়াতেও পারে না।