সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতীয় হাই কমিশনা হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আর বন্ধুত্ব শুধু একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না। বহু বিষয় নিয়েই বন্ধুত্ব হয়। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতীয় সরকার ইতিবাচক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিস্তা চুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। দুই দেশের জন্যই গ্রহণযোগ্য বিষয় থাকবে তিস্তা চুক্তিতে। গতকাল রোববার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করার সময় তিনি একথা বলেন।
হর্ষবর্ধন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী সীমান্তের আশেপাশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষে ভারত ও বাংলাদেশের সৈন্যরা রক্ত দিয়েছে। তখন থেকেই ভারতীয় সরকার বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। বর্তমান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে।
সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত করার বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান ভারতীয় সরকার খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে রাজশাহীতে এই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর বলে জানান তিনি। এই চুক্তি এই সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করবে। এছাড়া ভারতীয় ভিসা পদ্ধতি সহজ করার জন্য সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে সহজ ভিসা প্রাপ্তির মাধ্যমে রাজশাহীসহ সারাদেশের জনগণ ভারতে যেতে পারবে।
বাংলাদেশ সরকার এবং ভারত সরকারের মধ্যে ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ জধলংযধযর ঈরঃু ঃযৎড়ঁময ঃযব ওসঢ়ৎড়াবসবহঃ ধহফ ঈড়হংবৎাধঃরড়হ ড়ভ ঝড়পরধষ, ঈঁষঃঁৎধষ, ঊহারৎড়হসবহঃধষ ধহফ ঐবৎরঃধমব ওহভৎধংঃঁপঃঁৎবং শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২১ কোটি ৯৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার একটি অনুদান চুক্তি রাজশাহী সিটি করপোরেশনে রাজশাহীতে স্বাক্ষরিত হয়েছে। নগরীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ ও প্রতœততত্ত্ব অবকাঠামোর উন্নতির লক্ষ্যে ভারত সরকার এ অনুদান প্রদান করছে। এ উপলক্ষেই গতকাল নগরভবন সরিৎ দত্ত গুপ্ত নগরসভাকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত সরকারের পক্ষে ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহ মো. আমিনুল হক ও রাসিকের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর ছয়টি প্রাচীন মন্দির ও নগরীর তালাইমারী এলাকার প্রাচীন একটি গ্রন্থাগার সংস্কার, ফুটপাত নির্মাণ ও জলাধার নির্মাণ করা হবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, ইআরডি’র যুগ্ম সচিব কমলেশ কুমার দাশ, রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকে নগরভবন সম্মেলন কক্ষে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নাগরিক সংর্ধনা প্রদান করা হয়। রাসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্রিয়ার আলম এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মুনীর হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন, রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.এ বি এম শরীফ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র মো. নিযাম উল আযীম ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকে নগরীর চাবি উপহার হিসেবে তুলে দেন।
নাগরিক সংবর্ধনায় শাহরিয়ার আলম এমপি তার বক্তব্যে ভারতীয় সম্পর্কে প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক খুবই দৃঢ়। দুই দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক অপরকে সহযোগিতা করে থাকে। তিনি তার বক্তব্যে ভারতীয় হাই কমিশনারকে ভারতীয় ভিসা সহজ করার জন্য অনুরোধ করেন।
সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা তার বক্তব্যে রাজশাহী থেকে ভারতে যোগাযোগের জন্য রেলপথের যোগামাধ্যমকে কার্যকর করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে পশ্চিম বাংলার মালদহ ও কলকাতা পর্যন্ত রেলপথ সক্রিয় রয়েছে। সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে যেতে যে সমস্যা রয়েছে তা দূর করে যাত্রীবাহী রেলপথ যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া রাজশাহীতে ভারত ও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য শান্তিনিকেতনের মত মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। তিনিও রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার আহ্বান জানান।
আজ সোমবার ভারতীয় কমিশনার রাজশাহীস্থ পুলিশ একাডেমি ও নাটোর জয়কালী মন্দির পরিদর্শন করবেন।