তীব্র শীত ও কুয়াশায় বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২৪, ৭:৪৭ অপরাহ্ণ


নজরুল ইসরাম বাচ্চু, চারঘাট:


হঠাৎ কয়েকদিন ধরে ঘনকুয়াশা আর তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা। সূর্যের আলো ঠিক মত না পাওয়ায় বোরোর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ইতোমধ্যে কিছু জায়গায় বীজতলা হলুদ ও ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে।

তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ অঞ্চলের বীজতলা উঁচু জমিতে হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মত পরিবেশ হয়নি। প্রতিদিনই তারা মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর রাখছেন এবং কৃষকদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার রাজশাহী জেলায় বোরো ধানচাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এবার বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বীজতলা তৈরি হয়েছে ৪ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে। যা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্বের জেলা-উপজেলায় বিক্রি করবেন চাষিরা।

এবার শীত ও কুয়াশা অপেক্ষাকৃত কম থাকায় শুরুর দিকে বীজতলায় চারা সঠিকভাবে বাড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘনকুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে বীজতলা নিয়ে শঙ্কা আছেন চাষীরা। বীজতলা নষ্ট হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বোরো আবাদের ওপর।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, গত এক সপ্তাহ যাবত শীত ও কুয়াশা জেকে বসেছে। গত তিনদিন প্রচণ্ড কুয়াশা ছিল। দেরিতে সূর্যের দেখা পাওয়া গেলেও সারাদিনই ছিল নিভু নিভু।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস উচ্চ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, এ বছরের সর্বনি¤ ্নতাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গত ১০ জানুয়ারি রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রাছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১১ জানুয়ারি ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হঠাৎ করে এ সপ্তাহে রাজশাহীতে শীত পড়া শুরু হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমদিক থেকে ৮ কিলোমিটার বেগে মৃদু বাতাস বয়ে যাওয়ার কারণে শীত বেশি অনুভব হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহ বাতাস ও শীত এরকমই থাকবে, তবে কুয়াশার পরিমান বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে কৃষি অধিদপ্তর রাজশাহীর সাবেক উপ-পরিচালক ও চারঘাট উপজেলার বাসিন্দা কৃষিবিদ ব্রজহরি দাস বলেন, যদি বৈরী আবহাওয়া ও কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে প্রাকৃতিকভাবে বীজতলার ক্ষতি হবে। কিন্তু বর্তমানে আবহাওয়া যে অবস্থায় আছে তাতে ভাল রোদ পেলে বীজতলা ঠিক হয়ে যাবে।

সরেজমিন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে চাষীরা বীজতলার বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন। কেউ আগাছা পরিস্কার করছেন, আবার কেউ বীজতলায় পানি ও বালাই নাশক প্রয়োগ করছেন। শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষা পেতে অনেক কৃষক বিকেল হতেই বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন।

চার বিঘা জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন চারঘাট উপজেলার কৈ ডাঙা গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, নিজের ৩ বিঘা জমিতে চারা রোপণ করবো। আর বাকি চারা বাজাওে বিক্রি করবো। উঁচু জমিতে বীজতলা করার কারণে শীতে বীজতলা নষ্ট কম হচ্ছে কিন্তু পানির সংকটে পড়েছে বীজতলা। প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে, তাতে খরচ আরো বাড়ছে।

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, শীত ও কুয়াশার কারণে কিছু বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কাদা মাটির বীজতলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। এই আবহাওয়ায় করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জমিতে পানি রাখা ও কুয়াশা বেশি হলে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে বীজতলা নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই বলে জানান।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version