বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
শুধুমাত্র রাজশাহী অঞ্চলের একটি মাত্র সীমান্ত ছাড়া বাকিগুলো দিয়ে ভারত থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধ রয়েছে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে। ফলে ব্যাপারি ব্যবসায়ী হাটসহ এ কাজে কর্মরত শত শত মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। গবাদিপশু কেনা বাবদ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কয়েকশ কোটি টাকাও আটকে পড়েছে সীমান্তের ওপারে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। এছাড়া বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কেনা হাজার হাজার গরু মহিষ সীমান্তের ওপারে আটকে রয়েছে সীমান্ত বন্ধ থাকায়। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীসহ এলাকার মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা টাস্কফোর্সের সভাপতি বরাবর একটি স্মারকলিপিতে সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু-মহিষ আনার পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছেন।
আবেদনে শতাধিক ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসি বলছেন, দুই বছর আগেও সীমান্ত পথে গরু-মহিষ আনতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাধা দিত। অনেক ক্ষেত্রে বিএসএফের গুলি চালানোর ফলে মারা গেছে বাংলাদেশি রাখাল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের দুই পারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমঝোতা ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের কারণে বিএসএফ গরু-মহিষ আনতে বাধা দিচ্ছে না। সীমান্তে গুলি চালানোর ঘটনাও কমে এসেছে। বিজিবি বাংলাদেশি রাখাল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে বাংলাদেশি রাখালদের সীমান্ত অতিক্রমের হার কমিয়ে আনতে পেরেছে। এখন ভারতীয় রাখালরাই সীমান্ত পয়েন্টে গরু মহিষ দিয়ে যায় এবং বিএসএফ এক্ষেত্রে সহযোগিতাও করে।
তারা আরো জানান, গত দু’ মাস আগেও ভারতীয় রাখালরা সীমান্ত পয়েন্ট পর্যন্ত গরু মহিষ দিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে বাংলাদেশি রাখালরা বুঝে নিয়ে নিরাপদে ফিরে আসছিল। কিন্তু গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকাংশ সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু-মহিষ ঢুকতে দিচ্ছে না বিজিবি। শুধুমাত্র বগচর সীমান্ত পথে অনিয়মিতভাবে সীমিত আকারে কিছু গরু ঢুকতে দিচ্ছে। কিন্তু বগচর সীমান্ত এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় এবং পথে পথে গরুতে চাঁদাবাজি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা খাটাল আছে এমন সব সীমান্ত পথে ভারত থেকে গরু মহিষ আনতে দেয়ার দাবি করেছেন।
ব্যবসায়ীরা স্মারকলিপিতে আরো বলেছেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫/১৬টি খাটাল বা বিট দিয়েছে। দেশে গবাদি পশুর দৈনন্দিন ঘাটতি চাহিদা পূরণ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এসব খাটালের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু বিজিবি নিরাপত্তার কথা বলে মনোহরপুর, অহেদপুর, জোহরপুর, জোহরপুর টেক, বাখের আলী, চরবাগডাঙ্গা, হাকিমপুর, রাজশাহীর চরমাঝাড়দিয়াড়, সাহাপুর, চারঘাট প্রভৃতি খাটাল দিয়ে গবাদিপশু ঢুকতে দিচ্ছে না গত দুইমাসের বেশি সময় ধরে। এর ফলে রাজশাহী অঞ্চলের হাট বাজারগুলোতে যেমন গরু-মহিষের সঙ্কট চলছে, তেমনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন বলেন, স্বল্প খরচে ভারত থেকে গবাদিপশু আনার জন্য সরকার বাখের আলীসহ অন্য খাটালগুলি দিয়েছে। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র বগচর পয়েন্টটি ছাড়া সব খাটাল বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ কয়েকদিন আগেও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বিএসএফের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য কয়েক হাজার গরু সীমান্ত পয়েন্টে এনে জড়ো করেছিল। কিন্তু বিজিবি এসব গরু ঢুকতে দেয়নি। এতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এখন বিএসএফ গরু দিতে চাইলেও বিজিবি ঢুকতে দিচ্ছে না। এতে গরু ব্যবসা ও চলাচলের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।
দেশের বৃহৎ গরু-মহিষের হাট রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা গরুর জন্য হাটে আসলেও স্বল্পতার কারণে গরু কিনতে পারছেন না। আবার সীমান্ত বন্ধ থাকায় গরু-মহিষের দামও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সীমান্ত পথে গরু মহিষ না আসলে মাংসের জন্য হাহাকার পড়ে যাবে। দামও কয়েকগুণ হবে।
রাজশাহীর খাটাল মালিক আনোয়ার বলেন, বৈধভাবে ভারত থেকে গবাদিপশু আসা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন এপারে দাম বাড়ে। আর এ সুযোগে বেশি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে গরু-মহিষ পার করতে গিয়ে বিএসএফের গুলির শিকার হয়। এক্ষেত্রে বৈধভাবে গবাদিপশু আনলে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি যেমন এড়ানো যাবে, তেমনি গরুর ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে সরকারের রাজস্বও আসবে। তিনি রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বন্ধ খাটালগুলো দিয়ে গবাদিপশু ঢুকতে দেয়ার দাবি করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা টাস্কফোর্সের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, সীমান্ত পথে গরু আনার ব্যাপারে সরকারের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বিজিবির পক্ষ থেকেও কোনো আপত্তি রয়েছে বলে আমার জানা নেই। কেন বন্ধ আছে এ ব্যাপারে তিনি শিগগির খোঁজ নেবেন।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন, রাজশাহী সীমান্ত পথেও গরু আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।