সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৬ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সাইদুল ইসলাম
জাহিনের জন্ম বাংলাদেশে। কিন্তু তারা এখন থাকে নিউইয়র্কে। তার বাবা এক বিদেশি সংস্থায় চাকরি করে। তাই জাহিন যখন খুব ছোট তখন থেকে তারা নিউইয়র্কে। জাহিন এখন ক্লাস সেভেনে একটি বাংলা স্কুলে পড়ে। বাংলা স্কুল হলেও ইংরেজিই বেশি।
বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না জাহিন। বাবা আর মায়ের মুখ থেকে যা শুনেছে শুধু তা জানে। আবার মাঝে মধ্যে যখন সে দাদুর সঙ্গে কথা বলে তখন বাংলাদেশ নিয়ে গল্প জুড়ে দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন কথা শুনে তার জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়। সে তার বুকে আঁকতে তাকে স্বদেশের ছবি।
গুগলে সার্চ দিয়ে জাহিন বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান নিয়ে ছবি ও ভিডিও দেখে। সেখানে সে দেখতে পায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, সিলেটের চা-বাগান, পৃৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও আরও অনেক স্থান। এসব তার মনে নাড়া দেয়। সে মনে মনে ভাবে কি অপরূপ সুন্দর আমার জন্মভূমি, যদি যেতে পারতাম ! দাদা-দাদি, নানা-নানি সবার সাথে কি মজাই না হত!
স্কুল থেকে এসে টেবিলের উপর স্কুল ব্যাগ রাখল জাহিন। তার বাবাও অফিস থেকে এসে সোফায় বসে বসে পত্রিকা পড়ছে। হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল জাহিন। তারপর বাবার পাশে এসে বসল। জাহিন তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, একটা কথা বলি?’
‘হ্যাঁ বল’। তার বাবা বলল।
‘সামনে তো তোমার অফিস বন্ধ দিয়ে দিবে। আবার আমার স্কুলও বন্ধ দিয়ে দিবে। তাই বলছিলাম, চলো না, আমরা সবাই আমাদের দেশে বেড়াতে যাই। সেখানে তো নানা দাদু সবাই আছে। অনেক মজা হবে। আর এখন পর্যন্ত একবারও তো যাওয়া হয়নি!’
‘হ্যাঁ, আমিও ভাবছি দেশে যাব। অনেক দিন ধরে আব্বু-আম্মুকে দেখছি না। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি তোমার আম্মুর সাথে কথা বলে দেখি তারপর সিদ্ধান্ত হবে।’
‘ঠিক আছে আব্বু।’ এই বলে জাহিন তার রুমের দিকে গেল।
রাতে ডিনারের পর টেবিলে বসে আছে সবাই। জাহিনের বাবা তার মাকে দেশে যাওয়ার কথা বলল। তার মাও সম্মতি জানাল। দেশে যাওয়ার সমস্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেল, এখন শুধু যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি।
দেশে যাওয়ার আনন্দে জাহিনের ঘুমই হচ্ছিল না। তাই সে তার ল্যাপটপ অন করে বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও দেখল।
দেশে যাওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু অপেক্ষা। আর মাত্র তিন দিন পরেই বিমানে চড়ে সোজা চলে যাবে অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরা বাংলাদেশে।
অবশেষে চলে এল আনন্দের সেই দিন। আজ বিকাল পাচঁটায় তাদের বিমান ছেড়ে যাবে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে।
পরের দিন তারা পৌঁছে গেল বাংলাদেশে। তারা সোজা চলে গেল গ্রামের বাড়ি শেরপুরে। অনেক বছর পরে সবাইকে কাছে পেয়ে আত্মহারা হয়ে গেল জাহিন। যেন সে তার জীবনের সবকিছু ফিরে পেয়েছে।
২.
জাহিনরা দেশে এল পাঁচদিন হয়ে গেছে। এই পাঁচদিনে তারা পুরা গ্রাম ঘুরেছে। এখন ঘুরতে যাবে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে।
জাহিন তার বাবার কাছে বায়না ধরল যে প্রথমে কক্সবাজার যাবে। কারণ, সে গুগলে দেখেছে সেখানে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও আরও অনেক সুন্দর সুন্দর স্থান রয়েছে। তার বাবা-মাও রাজি হয়ে গেল। একটা গাড়ি ভাড়া করে পরিবারের সবাই মিলে রওনা দিল কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।
কক্সবাজার পৌঁছে প্রথমে তারা দেখল প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে ঘেরা সি বিচ। আরও দেখল হিমছড়ির পাহাড়, ইনানির বিচ। তারপর তারা গেল বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। কী সুন্দর সেই দ্বীপ! চারিদিকে নীল স্বচ্ছ পানি আর নানা প্রজাতির মাছ। কক্সবাজার ঘুরা শেষে তারা গ্রামে চলে এল।
গ্রামে কিছুদিন থাকার পর তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে সিলেটে যাওয়ার জন্য। সিলেটে গিয়ে তারা দেখল প্রকৃতি অপরূপ সৌন্দর্য্যে সজ্জিত। তারা উপভোগ করল চা-বাগান, প্রাকৃতিক ঝর্ণা। আবার তারা সেখানে বিভিন্ন জাতিসত্তার বসবাসও দেখল। এসব জাতিসত্তার কথা জাহিন তার বইতে পড়েছে। আজ তা নিজের চোখে দেখছে। সিলেট ভ্রমণ শেষে তারা দেশের আরও অনেক ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে বেড়াল।
জাহিনরা এসেছে তিনমাসের জন্য। সময় প্রায় শেষ আর মাত্র দশদিন বাকি। চলে যাওয়ার কথা মনে পড়লে জাহিনের খুব খারাপ লাগে। কী অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরা তার জন্মভূমি। গাছ-গাছালি বন-বনানি আরও কত কি! এসব কিছুর প্রেমে পড়েছে সে। কীভাবে ছেড়ে যাবে এদেশকে। সে তার ধর্ম বইতে পড়েছে দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। আজ তার মধ্যে সেই দেশপ্রেম জন্ম নিয়েছে।
আর মাত্র তিনদিন, তার পরেই তারা নিউইয়র্ক চলে যাবে। জাহিন তার বাবাকে বলেছে সে আর নিউইয়র্ক যাবে না। তার বাবা তাকে অনেক বুঝিয়েছে, কিন্তু তবুও মানাতে পারেনি। শেষ পযর্ন্ত সিদ্ধান্ত হলো জাহিন তার দাদুর কাছে থেকে যাবে।
জাহিনের বাবা-মা চলে গেল কিন্তু সে থেকে গেল দেশের প্রতি মমতার টানে। সে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তার বাবা-মাও এখন ঘন ঘন দেশে বেড়াতে আসে।
শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণি, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।