ধামা বিক্রয়ের সুখ্যাতি থেকেই ধামইরহাট নামের উৎপত্তি

আপডেট: জুলাই ১৬, ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ


আবুল বয়ান, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি:


ইতিহাস কোন খণ্ডিত বিষয় নয়, প্রকৃত ইতিহাস একটি জাতিকে মেধা ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলা। এই উপজেলার নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম বিশেষ আলাপচারিতায় জানিয়েছেন বিভিন্ন না জানা তথ্য- তিনি বলেন, ‘ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জনপদ আমাদের জন্মভূমি ধামইরহাট।

অসংখ্য নদ-নদী খালবিল পরিবেষ্টিত শস্য-শ্যামলা কৃষি প্রধান এই এলাকা। প্রাচীনকালে কৃষিপণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন কষ্টসাধ্য বিষয় ছিল। কালের বিবর্তনে আদিকালের প্রমত্তা নদী (বর্তমানের ঘুকসী খাল) তীরবর্তী এই স্থানে হাটটি গড়ে উঠে। দূর-দূরান্ত থেকে বণিকের দল ছোট বড় নানা ধরনের নৌকায় রোববার দিনের সাপ্তাহিক এই হাটের ক্রেতাদের জন্য দৈনন্দিন প্রয়োাজনীয় পণ্য নিয়ে আসত। ব্যবসায়িক লেনদেন শেষে বণিকেরা চাহিদামত হাজার হাজার মণ ধান চাল সহ অন্যান্য কৃষিপণ্য নিয়ে ফিরে যেতো নিজ গন্তব্যে।

বলা বাহুল্য যে, উনিশ শতকের শেষ ভাগে সাঁওতাল বিদ্রোহের পর ইংরেজ সৈন্যদের ভয়ে বনজঙ্গলে পালিয়ে থাকা আদিবাসী মানুষেরা জীবন জীবিকার তাগিদে কৃষকের চাহিদা পূরণে বাঁশ ও বেতের ডালা, কুলা, চাঙারি, খইচালা, মাথল, ধামা, ডোল প্রভৃতি গৃহস্থালি উপকরণ তৈরিতে মনোনিবেশ করে কালক্রমে দক্ষ কারিগরের সুখ্যাতি অর্জন করে।

অত্যন্ত সুন্দর ও মজবুত ধামা কিনতে দূর দূরান্তের ক্রেতারা ভিড় জমতো এই হাটে।
প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে দু’চারটে ধামার প্রয়োজন পড়তো আর অন্য সব পন্য লেনদেন করতেও ধামাই ছিল প্রধান অবলম্বন। এই ধামা কেনা বেচার রোববার দিনের বিখ্যাত সাপ্তাহিক হাট থেকেই ধামইরহাট নামের উৎপত্তি হয়েছে।

বলা বাহুল্য যে, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকার ও মুদ্রা ব্যবস্থার ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে জনসাধারণ মুদ্রার পরিবর্তে পণ্য বিনিময় ব্যবস্থার উপর আস্থাশীল ছিল। এছাড়াও সেকালে পাটের বস্তা এবং ওজন পরিমাপের বাটখারার ব্যাপক প্রচলন না থাকায় পণ্য বিনিময় পদ্ধতিতে বেতের তৈরি ধামা, দোন ও কাটা’র কোন বিকল্প ছিল না।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, আমাদের উপজেলার নামের বিকৃত উচ্চারণ সকলকে কম বেশি লজ্জিত ও বিব্রত করে। কিন্তু এই বিষয়ে দায়িত্ব¡শীল মহলের কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ‘ধামা’- কে সকলের সামনে তুলে ধরা হোক।

উদাহরণ স্বরূপ সিঙ্গাপুরে জাতির পূর্ব-পুরষেরা ছিল দরিদ্র মৎস্যজীবী। তাদের অতীত ঐতিহ্যের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনকল্পে সিঙ্গাপুরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমন ফটকে মৎস্যজীবীদের মাছের ঝুড়ি নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র তাদের দরিদ্র পূর্বপুরুষের পেশা মৎস্যজীবীদের মাছের ঝুড়ি প্রদর্শন করে গর্বিত জাতির পরিচয় বহন করছে। আসুন আমরাও আমাদের ধামইরহাট নামের ঐতিহ্যের স্মারক ধামাকে সগৌরবে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরি।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ