শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের সোলার স্ট্রিট লাইটগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বছরের পর বছর এই সড়ক বাতিগুলো নষ্ট হওয়ার কারণে রাতের অন্ধকারেই চলাচল করতে হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের হাজার হাজার মানুষদের। রাতের আঁধারে ঘটছে চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড। অপরদিকে নষ্ট হওয়া গ্রামীণ সড়কের শত শত সোলার স্ট্রিট লাইটগুলো পুনরায় মেরামত করার কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান সাবেক এমপি মরহুম আব্দুল জলিল বিলবেষ্টিত গ্রামগুলোর সঙ্গে নওগাঁ শহরের সহজেই যোগাযোগ করার জন্য হাঁসাইগাড়ি বিলের মধ্যদিয়ে নির্মাণ করেছিলেন বহুদিনের কাঙ্খিত নওগাঁ-দুবলহাটি-হাঁসাইগাড়ি-কাঠখৈর গ্রামীণ সড়কটি। সড়ক দিয়ে শতাধিক গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই নওগাঁ শহরে যাতায়াত করে থাকে। এই গ্রামীণ সড়ক দিয়ে শুধু সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারাই নয় জেলার রাণীনগর ও মান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তি অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ সটকাট এই সড়ক দিয়ে নওগাঁ শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে যে, হাঁসাইগাড়ি বিলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সড়কটি পূর্বে রাতের আঁধারে অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতো। সেই অন্ধকার দূর করার লক্ষ্যে প্রায় ৭বছর আগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরের আওতায় পুরো সড়ক জুড়ে স্থাপন করা হয় শতাধিক সোলার স্ট্রীট লাইট। তিন বছর রক্ষণাবেক্ষণের শর্তে ঠিকাদারের কাছ থেকে জামানত নিয়ে স্থাপন করা হয়েছিলো লাইটগুলো।
এরপর থেকে লাইটগুলো নষ্টের পর কোন মেরামত না করায় দিনের পর দিন চুরি হতে লাগে লাইটগুলোর বিভিন্ন উপকরণ। বর্তমানে সড়কের পাশে স্থাপন করা কোন কোন লাইটের শুধু পাইপ দাঁড়িয়ে আছে আবার কোন কোন লাইটের সোলার অংশটি আবার কোনটির লাইট ও সোলার দুটিই চুরি হয়ে গেছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই গ্রামীণ সড়কটির পুরো অংশই আবারো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ফলে সন্ধ্যার পর থেকে এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে বসে মাদক সেবীদের আখড়া আবার কোথাও ওঁৎ পেতে বসে থাকে ছিনতাইকারীর দল। প্রায়শ অন্ধকার এই সড়কের কোথাও না কোথাও চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষদের অন্ধকারের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। শুধু হাঁসাইগাড়ি গ্রামীণ সড়কটিই নয় সদর উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়কে স্থাপন করা সোলার স্ট্রিট লাইটগুলোর একই দশা।
মান্দা উপজেলার চকউলী গ্রামের ভ্যানচালক আসকর আলী বলেন আগে রাস্তার লাইটগুলো জ্বলতো তাই রাতের বেলাতেও যাত্রী নিয়ে চলাচল করা যেতো কিন্তু দীর্ঘদিন লাইটগুলো নষ্ট হওয়ার কারণে রাতের আঁধারে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দ্রুত যদি এই লাইটগুলো নতুন করে মেরামত করা না হয় তাহলে লাইটের পাইপগুলোও আর ক’দিনের মধ্যে উধাও হয়ে যাবে।
হাঁসাইগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান বলেন, বছরের পর বছর নষ্ট হওয়া সড়ক বাতিগুলো মেরামত না করায় শহরের সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শতাধিক গ্রামের বাসিন্দারা। এছাড়া প্রায়ই রাতের আধাঁরে আমরা চুরি-ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়ছি। ইতিমধ্যে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে পথচারী নিহত হওয়ার নজিরও সৃষ্টি হয়েছে। তাই দ্রুত জনগুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘ এই গ্রামীণ সড়কটির বাতিগুলো মেরামত করে আলো জ্বালানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, প্রকল্প ভিত্তিক হওয়ার কারণে পরবর্তিতে এই লাইটগুলো মেরামত করার কোন অর্থ বরাদ্দ না আসার কারণে নষ্ট লাইটগুলো আর মেরামত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে দিন দিন নষ্ট হওয়া লাইটগুলোর বিভিন্ন উপকরণগুলো হারিয়েই যাচ্ছে। যদি অর্থ বরাদ্দ দিয়ে নতুন করে লাইটগুলো মেরামত করা যেতো তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়কটি আবার আলোকিত করা সম্ভব হতো। আর উপকৃত হতো শতাধিক গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দা।