নিরবতা ভাঙ্গলেন অং সান সু চি ।। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা লুকানো যাবে কি?

আপডেট: ডিসেম্বর ৩, ২০১৬, ১১:৫৯ অপরাহ্ণ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ামারের সমালোচনা বিস্তৃত হওয়ার মুখে শেষ পর্যন্ত নিরাবতা ভেঙ্গেছেন সে দেশের নেত্রী অং সান সু চি। এতদিন মূলত ওই দেশের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কথা বলে আসছিল। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নীরব থাকায় মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সু চির সমালোচনা হচ্ছি নানা মহল থেকে। তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও তোলা হয়েছে।
অং সান সু চি মিয়ানমারের রাখাইনে বৌদ্ধদের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধ বাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দুষছেন। সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে সু চি বলেন, “আমি খুব খুশি হব যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব সময় বড় ধরনের অসন্তোষ ছড়ানোর কারণ তৈরি না করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ার জন্য অগ্রগতি আনতে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমাদের সহযোগিতা করে।” সু চি বলছেন, তার দেশের সরকার পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে’। তিনি বলেছেন, বিশ্ববাসীর এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে সেখানে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার পর, যার জন্য মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দায়ী করেছে সরকার।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন চলতি সপ্তাহে বলছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে। এরপরই সু চি তাঁর প্রতিক্রিয়া জানালেন।
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনা অভিযান। এরপর সহিংসতায় ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে ৬৯ জনকে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলেছে তারা। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। এর আগে ২০১২ সালে রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর সেখানে আলাদাভাবে বসবাস করে দুই সম্প্রদায়।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দাবি করছে যে, সেখানে আগুন দিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেয়ার পর চলছে হত্যা-নির্যাতন-ধর্ষণ, তা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে ঢোকার জন্য পড়তে হচ্ছে দালালদের খপ্পরে- মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের চিত্র এখন এমনই। দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের স্রোত ঠেকাতে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও ফাঁক-ফোকর গলে অনেক রোহিঙ্গাই ঢুকে পড়েছেন বাংলাদেশে। রাখাইনে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির তৎপরতা বাড়ানো হলেও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এরইমধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
অং সান সু চির আবহান যৌক্তিক কিন্তু সময়োপযোগী নয়। এমন আহবান তিনি অনেক আগেই জানাতে পারতেন। সেখান মানবাধিকার পরিস্থিতি যখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে তখনই বিশ্ব সম্প্রদায় সোচ্চার হয়েছে। ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সূ চির নিরবতা বিশ্বের গণতান্ত্রিক বোধসম্পন্ন মানুষকে আহত করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে। অং সান সু চির অভিযোগ যে মোটেও সঠিক নয়Ñ তার প্রমাণ সেদেশের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায় দিয়েই চলেছে। সু চির সম্মতিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন সে দেশে কাজ কার করতে পারছে না। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান এর নেতৃত্বে নয় সদস্যের এই আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনে মিয়ানমারের ছয়জন এবং কোফি আনান ছাড়া আরও দুজন বিদেশি প্রতিনিধি আছেন। ওই কমিশনের বিরুদ্ধে কট্টর বৌদ্ধরা বিক্ষোভ জানাচ্ছে এবং ওই কমিশন বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদেশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এর অর্থ এই যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছেÑ যা দেশের কর্তৃপক্ষ সমর্থন জানাচ্ছেন।
অং সান সু চির বক্তব্যে গ্রহণযোগ্যতা তখনই নিশ্চিত হবেÑ যে মুহুর্তে কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদেশি সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও ত্রাণকর্মীদের জন্য প্রবেশ অভিগম্যতা সৃষ্টি করা হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ