রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে গুলিবর্ষণের ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ২৭ জন গুলিবিদ্ধ সহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড় চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ২টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত ও আহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলো- পাবনা সদর উপজেলার হাজীরহাট বেতেপাড়া এলাকার আরাফাত হোসেন মাহবুবুল (১৬), বলরামপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম (১৯) ও একই গ্রামের ফাহিম হোসেন রাজ্জাক (১৭)। তারা শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী রোববার বেলা ১১টার দিকে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় হাজারো শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রাণ কেন্দ্র আব্দুল হামিদ সড়কের ট্রাফিক মোড় চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে এক দফা দাবিতে নানা শ্লোগান দিতে থাকে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পেছন থেকে (হাসপাতাল রোড এলাকার দিক থেকে) পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ খান ও তার লোকজন অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী জাহিদুল, মাহবুবুল ও ফাহিম সহ অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের উদ্ধার করে দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অনেক আহতকে হাসপাতালে আনার পর তিনজন মারা যায়। আর ২৭ জন গুলিবিদ্ধ সহ অন্তত ৪০ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়লে সাময়িক সময়ের জন্য বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পালিয়ে যায় মিছিলে হামলাকারীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের দু’টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মৃত্যুর খবর শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা আবারো বিক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাফিক মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা পুলিশের বাধা পেরিয়ে আওয়ামীলীগ অফিসের দিকে এগিয়ে গেলে শুরু হয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষ। দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিক্ষোভকারী একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, তাদের ৪০-৪৫ জন শিক্ষার্থী ভাই আহত হয়। তাদেরকে দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনজন মারা যায়।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষাথীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ঘোষিত কর্মসূচী পালন করছিল। এ সময় হঠাৎ করেই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কে বা কারা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।