প্রচারণা শেষ চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ

আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল আটটায়। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) ছিল শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণার ব্যস্ততার মাঝেও সর্বত্র চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। দলীয় প্রার্থীরা দলের সুবিধা পেলেও পিছিয়ে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমর্থন আদায়ে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। নৌকার দলীয় প্রার্থীদের চেয়ে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনি মাঠে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।

এবার রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা রয়েছেন। রাজশাহী-২ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে জোট প্রার্থীকে। রাজশাহী-৩ আসনে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠ সরগরম। তবে সবগুলো আসনে শক্ত প্রার্থী আছে।

রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছেন তিনবারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বাদে আরও তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে। তবে এই আসনে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুণ্ডুমালার সাবেক পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য আয়েশা আক্তার ডালিয়াও আছে ভালো অবস্থানে সেই সাথে আছে ঢাকার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শারমিন আক্তার নিপা (মাহিয়া মাহি)। এই আসনে বিএনএম প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবুও প্রচারণায় ভালো অবস্থান করেছেন।

রাজশাহী-২ আসনে ১৪ দলের মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। এই আসনে এই দুই প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই আসনে প্রার্থী আছে জাসদের। জাসদ মহানগর সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলীও প্রচারণায় ভালো অবস্থান করেছেন। তবে বাকি চারজনের সেভাবে প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়নি।

রাজশাহী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু। তিনি নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে বের হয়ে বিএনএমে যোগ দেন। পান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদও। এই দল থেকে তিনি নির্বাচন করছেন। অনেকটা নিরবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে গেছেন তিনি।

রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌর মেয়র অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হক। এই আসনে প্রচারণার শুরু থেকে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, নির্বাচনি কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে। দুই প্রার্থীই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কথা দিয়ে এসেছিলেন সংঘর্ষে জড়াবেন না। তারপরও এই আসনে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ হয়েছে। এই আসনে দুই প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

রাজশাহী-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা সাধারণ সম্পাদ আবদুল ওয়াদুদ দারা। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান। এছাড়াও এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবুল হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রাজশাহী-৬ আসনে চারবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন শাহরিয়ার আলম। তিনি বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তারও এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছে এই নির্বাচনে। সাবেক সংসদ সদস্য রাহেনুল হক তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এই দুই প্রার্থীর লড়াই হবে বলে মনে করেন ভোটাররা।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শতভাগ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করলে সাথে সাথে ভোট বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই কারণে এবার ভোটাররা অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছেন যে, সুষ্ঠু ভোট হবে। তারা কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দ মতো প্রার্থীকেই ভোট দিতে পারবেন। নৌকার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও সেভাবে ভোটের মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন। দলের নেতাকর্মী, স্থানীয় ভোটারসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। প্রার্থীর ইমেজের কারণে এলাকাভিত্তিক গ্রহণযোগ্যতাও প্রাধান্য পাচ্ছে। আঞ্চলিকতাকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা।

প্রচারণার শেষ সময়ে বিভিন্ন এলাকা নির্বাচনি পোস্টারে ছেয়ে গেছে। সর্বত্র আলোচনা শুধু জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। অলি-গলির চায়ের দোকানেও নির্বাচনি ঝড় বইছে। চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী, রিকশা চালক, আগন্তুক, দিন মজুরসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ যারাই চায়ের দোকানে বসছেন তাদের বেশিরভাই নির্বাচনি আলোচনায় আড্ডা সরগরম করে তুলছেন। বিভিন্ন প্রার্থীর প্রশংসা, উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরাসহ চলছে সমালোচনাও। চায়ের কাপের টুং টাং শব্দের সঙ্গে যেন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ভোট নিয়ে জটিল অংক কষা, জল্পনা-কল্পনা।

কুমারপাড়া এলাকার একটি চায়ের দোকানে আলোচনা করছিলেন অটোরিকশাচালক সিদ্দিকুর রহমান। তার আলোচনা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন দোকানে বসে থাকা অন্যরা। তারাও সিদ্দিকুরের সঙ্গে সুর মিলাচ্ছেন। কেউ কেউ তার বিরোধিতা করে যুক্তি তুলে ধরছেন। শুধু চায়ের দোকান নয়, হোটেল রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহন সব জায়গায় চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ।

অলোকার মোড়ে একটি চায়ের দোকনে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভোটের হালচাল নিয়ে আলোচনা করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার আলোচনায় যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় আরও কয়েকজন। চা খেতে খেতে কথা হয় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুরো দেশেই এখন ভোট আর রাজনৈতিক আলোচনা। আামদের দেশের মানুষ রাজনৈতিক বিষয়ে খুবই আগ্রহী।

চায়ের দোকানি বলেন, নির্বাচনি হাওয়া শুরুর পর চা বিক্রি বেড়ে গেছে। কারণ সবাই এসে স্টলে বসে নির্বাচন, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা আর একের পর এক চা সিগারেট খাচ্ছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ