সোনার দেশ ডেস্ক
প্রতিটি হত্যার তদন্ত ও বিচার করাই হচ্ছে মানবাধিকারের দাবি। একইসঙ্গে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা (মব জাস্টিস) অগ্রহণযোগ্য। মামলা করার সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা জরুরি। বাংলাদেশে দুই দিনের সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক। মঙ্গল ও বুধবার এই দুই দিন তিনি প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করেছেন।
মব জাস্টিস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যেই করে থাকুক, প্রতিটি সহিংসতার তদন্ত হওয়া দরকার। যেকোনও ধরনের মব জাস্টিস অগ্রহণযোগ্য। এজন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা দরকার।’
অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাড়া কোনও মামলা করা যায় না। এটি সুরাহা করা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। আগে যা করা হতো সেটির পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ যে কেবল আওয়ামী লীগের সদস্য বা সমর্থকসহ তাদের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয় না।’
হত্যাকাণ্ড
৫ আগস্টের পরে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেটির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘দোষী যেই হোক, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হওয়া দরকার, এটি খুব পরিষ্কার। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হওয়া দরকার এবং এটি মানবাধিকারের দাবি। হত্যাকাণ্ডের দায়মুক্তি দেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিপুল সংখ্যক হত্যার অভিযোগসহ কিছু অভিযোগ যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতীতের নিদর্শনগুলোর পুনরাবৃত্তি না করা গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যা মামলার সম্ভাব্য বিস্তার মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি কমিটি গঠনকে আমি স্বাগত জানাই। যথাযথ প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।’
দুই দিনের সফর শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক ফৌজদারি ন্যায়বিচার গুরুত্বপূর্ণ, তবে অভিযোগগুলো যাতে তাড়াহুড়ো করে আনা না হয় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ সর্বত্র যথাযথ প্রক্রিয়া এবং সুষ্ঠু বিচারের মান বজায় রাখা হয় তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অতীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যধারার সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন ছিল। আমার অফিস আইসিটি আইন সংশোধন, এটিকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এবং সুষ্ঠু বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার সঙ্গে আপস না করে ন্যায়বিচার প্রদানের বিষয়ে মন্তব্য করেছে। আমরা অন্যান্য উপায়ের দিকে নজর দেব যাতে আমরা এই প্রক্রিয়াটিকে সমর্থন করতে পারি। আমি আশা করি ভবিষ্যতে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার নিয়েও জনসমক্ষে আলোচনা হবে।’
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ
ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করে সেটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস আইন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এর ফলাফল কী হতে পারে, সেটি আমরা দেখেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা ভিন্নমত পোষণকারি বা রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বি, তাদের সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।’
বাংলাদেশে অফিস খোলা নিয়ে তিনি বলেন, যখন একটি দেশ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায়, তখন আমরা তাদের সহায়তা দিতে পারি। আমার ইচ্ছা প্রতিটি দেশে অফিস খোলা, কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে এটি সম্ভব নয়। সেজন্য আমরা অগ্রাধিকার দেই কোথায় এটির সবচেয়ে প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন