বাংলাদেশের আবহাওয়া প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে

আপডেট: আগস্ট ৪, ২০১৭, ১:২৯ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের জনগণের জন্য খোলা আকাশের নিচে কাজ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ওই সময় নাগাদ বাংলাদেশের কিছু অংশ, ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল এতোটাই উষ্ণ ও আর্দ্র হয়ে উঠতে পারে যে তাতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কৃষক ও নির্মাণশ্রমিকদের মতো খেটে খাওয়া মানুষরা বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। বুধবার (২ আগস্ট) হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এর এক দল গবেষক এমন দাবি করেছেন।
হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এর শিক্ষক ইয়ুন সুন ইম-এর নেতৃত্বে তৈরি গবেষণা প্রতিবেদনটি বুধবার মার্কিন সাময়িকী সায়েন্স এডভান্সেস-এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মানুষ অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। যদি কার্বন নিঃসরণ কমানো না যায়, তবে ২১০০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা অসহনীয় ও প্রাণঘাতীকর পর্যায়ে পৌঁছাবে।
বিশ্বের সরকারি আবহাওয়া দফতরগুলো দুই ধরনের থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা নির্ণয় করে থাকে। এর একটি হলো ড্রাই বাল্ব থার্মোমিটার এবং আরেকটি হলো ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটার। ড্রাই বাল্ব থার্মোমিটার দিয়ে বাতাসের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। আর ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটার দিয়ে নির্ণয় করা হয় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা। সাধারণত বাতাসের তাপমাত্রার তুলনায় আর্দ্রতার মাত্রা কম থাকে।
মানুষের শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু আমাদের শরীরের বাইরে অর্থাৎ ত্বকের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। ভেতরে ও বাইরে তাপমাত্রার এই পার্থক্যের কারণে শরীরের ভেতরের বিপাকক্রিয়াজনিত তাপ ঘামের মাধ্যমে বাষ্প হয়ে বের হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ওয়েট বাল্বে যদি আর্দ্রতার পরিমাণ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়ে যায়, তাহলে শরীর থেকে তাপ বেরিয়ে যাওয়ার হার দ্রুত কমে যেতে থাকে। এটি এমন ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছাতে পারে যে ছয় ঘণ্টার মধ্যে একজন সুস্থ মানুষেরও মৃত্যু হতে পারে। তার কারণ, ওয়েট বাল্বে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাত্রার মানে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ সীমা। আদ্রতার ক্ষেত্রে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসকেই বিপজ্জনক মাত্রা বলে মনে করা হয়।
পৃথিবীর রেকর্ডকৃত তাপমাত্রার ইতিহাসে ওয়েট বাল্বে তাপমাত্রার সীমা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ানোর ঘটনা খুবই বিরল। ২০১৫ সালে ইরানে ওয়েট বাল্বে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদরা। একইবছরের গ্রীষ্মে ভারত ও পাকিস্তানে তীব্র দাবদাহে সাড়ে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্বন নিঃসরণের হার না কমানো হলে দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলে ওয়েট বাল্বের তাপমাত্রা সীমা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যেতে পারে। গঙ্গা অববাহিকা, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ, চীনের পূর্ব উপকূল, শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চল এবং পাকিস্তানের সিন্ধু উপত্যকায় ওয়েট বাল্বে তাপমাত্রার সীমা চরমে পৌঁছাতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এই অঞ্চলে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ ভবিষ্যতে ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটারে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু কম-বেশি তাপমাত্রার মধ্যে বসবাস করবে। তবে বর্তমানে এসব এলাকায় এই ধরনের হুমকির মাত্রা শূন্য।
প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ ২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। গত এপ্রিলে ১৭৫টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় আরও রয়েছে- গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা। অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্রকে সেই চুক্তিকে
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা যায়, তাহলে ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠার আশঙ্কা ২ শতাংশ কম হবে। সত্যি বলতে, শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পৃথিবীটাই জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে রয়েছে। শিল্প বিকাশের হাত ধরে ভয়াবহভাবে যে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তা রোধ করতে না পারলে হয়তো পৃথিবীটা একসময়ে বাসযোগ্য থাকবে না। মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন গবেষণা প্রতিবেদনেও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সূত্র: বিবিসি, এপি, বাংলা ট্রিবিউন