শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাঘায় ‘১০০ সন্তানের বাবা’ সাদা মনের মানুষ সামসুদ্দিন সমেস ডাক্তার আর নেই। শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর দেড়টায় নিজ বাড়ি উপজেলার সরেরহাট গ্রামে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন তিনি ( ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে।
জানা গেছে, গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ-আজিজ বৃদ্ধা নিকতনের পরিচালক ছিলেন ১০০ সন্তানের বাবা সামসুদ্দিন সমেস ডাক্তার। তিনি ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর গড়গড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখান থেকে তিনি সরেরহাট গ্রামে চলে আসনে। তিনি ১৯৬৪ সালে দাদপুর-গড়গড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে কালিদাসখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে আব্দুলপুর কলেজ থেকে ১৯৭২-৭৩ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি পাশ করেন।
শাহদৌলা ডিগ্রী কলেজে বি,এ ভর্তি হয়েও অর্থের অভাবে লেখাপড়া আর হয়নি। এরপর একই গ্রামের মেহেরুন্নেছার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের আগে যুদ্ধকালীন অনেক শিশু সন্তান বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যায় এবং অসহায় অবস্থায় ঘুরতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। এতিম শিশুদের কিভাবে প্রতিপালন করা যায়, এই চিন্তা তার মনে দানা বাধঁতে থাকে। ১৯৮৪ সালে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পিতার কাছে থেকে পাওয়া নিজের জমি বিক্রি করে একটি এতিমখানা স্থাপন করেন।
তার নাম রাখা হয় সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন। পরে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ-আজিজ বৃদ্ধা নিকতন রাখা হয়েছে। এতিম খানা চালাতে গিয়ে নিজের জমির পাশাপাশি স্ত্রীর ১৭ বিঘা জমি বিক্রয় করতে হয়। এখানে ২৫০ জন ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধ রয়েছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে বেকায়দায় পড়লে ১৯৮৩-৮৪ সালে। এ সময় উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস পাশে দাঁড়ায়।
এ অবস্থা দেখে ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইউনিলিভার একদিনের কর্মশালা করেন। ২০০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাদা মনের মানুষ হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে ১ লক্ষ্য টাকা পুরুষ্কার, স্বর্ণপদক, ক্রেস্ট, শেরোয়ানি, সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে পান্না পাড়া হাইস্কুল, বাঘা সমিতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নির্মোহ মানব সেবক, ২০০৮ সালে রাজশাহী জেলা সমিতি ঢাকা, রোটারী ক্লাব অব মতিঝিল ঢাকা, এসো বাংলাদেশ গড়ি, ২০১১ সালে বই মেলা, মনিগ্রাম মানব কল্যাণ সংগঠন, ২০১৩ সালে জাতীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্যাফার ল্যাড স্কুল আহমদপুর, ২০১৩ বাঘা উপজেলা সম্মাননা দেন।
তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে শোক প্রকাশ করে মরহুমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।