শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
পাবনা প্রতিনিধি
‘আপনার জামায় বোতাম আছে এতে আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি হবে না। নরম কাপড় পড়ে আসেন। এক পর্যায়ে মেয়েটি বাথরুমে কাপড় পরিবর্তন করতে যান। সেই সময় চুপি চুপি বাথরুমের দরজার উপর দিয়ে মেয়েটির অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে এক যুবক। পরে এক পর্যায়ে মেয়েটি টের পেয়ে চিৎকার করে। পরে অভিযুক্তকে আটক করে ক্লিনিকে থাকা লোকজন।’
এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর বাজার মা জেনারেল হাসপাতালে। আর অভিযুুক্ত যুবকের নাম ইসমাইল হাসান। তিনি ওই ক্লিনিকের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে কাশিনাথপুর মা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটন ঘটে। ভুক্তভোগী যুবতীর বাবা আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী যুবতীর বাবা জানান, শুক্রবার বিকেলে আমি সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর বাজারের মা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার আব্দুস সবুর এর কাছে আমার মেয়ে ও স্ত্রী হার্টের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। এ সময় ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং ইসিজি করতে বলেন।
হাসপাতালের ম্যানেজার ইসমাইল হাসান মেয়েটিকে বিভিন্ন ধরনের তালবাহানামূলক কথা বলেন। পরে বলেন, আপনার গায়ের জামায় বোতাম আছে এতে আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি হবে না। নরম কাপড় পড়ে আসেন। এক পর্যায়ে আমার মেয়েটি বাথরুমে কাপড় পরিবর্তন করতে যায়। সেই সময় ওই ম্যানেজার চুপি চুপি বাথরুমের দরজার উপর দিয়ে মোবাইল দিয়ে মেয়েটির উলঙ্গ ভিডিও ধারণ করে। এক পর্যায়ে মেয়েটি টের পেয়ে চিৎকার করে এবং আমাদের জানায়। পরে বিষয়টি হাসপাতালের মালিক রুবেল খান কে জানাই আমরা। এ সময় আশে পাশে থাকা অন্যান্য রোগীরা লম্পট ম্যানেজারকে একটা কক্ষে আটকে রাখেন।
মেয়েটির বাবা-মা ক্লিনিক মালিককে অনুরোধ করেন বলেন, অভিযুক্ত ছেলেটির কাছে যে ভিডিও আছে তা ডিলিট করে দেন। মালিক রুবেল খান গড়িমসি করেন এবং এক পর্যায়ে অভিযুক্ত ম্যানেজারকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন। এ সময় আশেপাশের লোকজন জমায়েত হয় ক্লিনিকের সামনে। হাসপাতাল মালিক তার স্থানীয় ক্যাডার বাহিনীকে খবর দিয়ে এনে উল্টো ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন। এতে ভুক্তভোগী পরিবার চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
মেয়েটির বাবা আরও জানান, ’আমার মেয়ে অবিবাহিত, অনার্স এ পড়াশোনা করছে। এখন যদি ওই অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়, তাহলে তার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। আমি আইনের আশ্রয় নেবো। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, মা জেনারেল হাসপাতালের মালিক কাশিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়রের ছত্রছায়ায় অনেক অবৈধ কাজ করছেন। তার হাসপাতালে একজন ডাক্তার আছে তিনি নারী লোভী। সুন্দর সুন্দর মেয়ে ছাড়া তিনি তার হাসপাতালে থাকতে চান না। তার হাসপাতালে অসামাজিক অনেক কর্মকাণ্ড হয়। ইসিজি করার সময় সুন্দরী মেয়েদের ছবি তুলে তাদের ব্লাকমেইল করে অসামাজিক কাজে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ম্যানেজার ইসমাইল হাসানের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালের মালিক জাহাঙ্গীর করিম খাঁন রুবেল জানান, ’এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে, তবে আমার হাসপাতালে না। সেটা আমার পাশের ইবনে সিনায়। ইবনে সিনার মালিক কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার বাবার সেটা। ওই ম্যানেজারকে তাৎক্ষণিক বহিস্কার করা হয়েছে। সে পলাতক আছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপরে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল বাতেন বলেন, ’এটা তারা অন্যায় করেছে। আমি হাসপাতালের বাইরে আছি। হাসপাতালে এসে শোকজ করবো।’