বিদায় বেলায় শিল্পকলার বিশেষ বরাদ্দের লাখ টাকা নিয়ে গেলেন রাণীনগরের ইউএনও

আপডেট: জুলাই ১০, ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:


বিদায় বেলায় নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রায় দেড় লাখ টাকা আত্মসাৎ করে নিজের পকেটে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে সদ্য বদলি হওয়া ইউএনও উম্মে তাবাসসুমের বিরুদ্ধে। পূর্বের অনেক অনিয়ম আর দূর্নীতি উপজেলাবাসীর মনে তেমন একটা দাগ না কাটলেও অবহেলিত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্দকৃত অর্থ গোপনে আত্মসাৎ করার বিষয়টি নতুন করে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।

উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী সূত্রে জানা গেছে, ভালো কর্মকাণ্ডের কারণে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য জেলার রাণীনগর ও নিয়ামতপুর উপজেলাকে গত অর্থবছরে (গত মে-২০২৪ মাস) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে এক লাখ করে টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

যে অর্থ সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রদান করা হয় যা পরবর্তিতে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির কমিটির পরামর্শক্রমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার কথা এবং উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি গঠনতন্ত্রের ধারা-৮ এর উপধারায় বলা আছে যে “উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি সাধারণ তহবিল হিসাবটি সভাপতি/আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক-এর যে কোনো একজন এবং কোষাধ্যক্ষ/সদস্য-সচিব এর যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে” এমন নিয়ম থাকলেও ইউএনও উম্মে তাবাসসুম কোন কিছুর তোয়াক্কা না উর্দ্ধতন কর্মকর্তার অজুহাতে নিজের কাছে আসা বরাদ্দের অর্থ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব হিসাবে নম্বরে জমা না দিয়ে গোপনে অন্য ব্যাংকে আলাদা হিসাব খুলে টাকা উত্তোলন করেছেন। উত্তোলনকৃত টাকা উপজেলার বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে ইতোমধ্যেই অনেক টাকা খরচ করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া শিল্পকলার নামে বরাদ্দ হওয়া নিয়মিত বাৎসরিক ৫০হাজার টাকারও কোনো হদিস মিলছে না।

উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির ওস্তাদ আব্দুল মান্নান বলেন, পূর্বের প্রতিটি ইউএনও স্যার শিল্পকলা একাডেমির উন্নয়নের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে গেছেন। তিলে তিলে অনেক কষ্ট করে আজকের শিল্পকলা একাডেমিকে তৈরি করে ধরে রেখেছি।

শিল্পকলার পিছনে পড়ে থেকে জীবন শেষ করে দিলাম। আমি একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষ। পূর্বের স্যারেরা আমার ও তবলচি বাবলুর পারিবারিক অবস্থা খুব খারাপ দেখে প্রতি মাসে ছোট্ট একটি ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়া প্রতি উৎসবে অল্প করে উৎসব ভাতাও চালু করেছিলেন কিন্তু উম্মে তাবাসসুম স্যার এসে আমাদের দু’জনের জন্য বরাদ্দকৃত সকল ভাতা বন্ধ করে দেন।

তিনি বিভিন্ন সময়ে শিল্পকলা একাডেমির তহবিলে থাকা বিভিন্ন অনুদানের অর্থও উপজেলার বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে খরচ দেখিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিদায় বেলায় এমন একটি অবহেলিত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের অর্থও আত্মসাৎ করে গেলেন যা খুবই পরিতাপের বিষয় এবং ন্যক্কারজনকও বটে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা উপজেলা শিল্পকলাকে আধুনিকায়ন করে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে সুস্থ্য ধারার সংগীতের শিক্ষা পৌছে দিতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার এমন জঘন্য দূর্নীতি সত্যিই এক লজ্জাজনক ঘটনা।

উপজেলা শিল্পকরা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, যেহেতু নিয়মানুসারে শিল্পকলা একাডেমি কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেহেতু শিল্পকলার জন্য সকল বরাদ্দই সরাসরি ইউএনও বরাবর আসে।

তাই বরাদ্দের বিষয়টি আমাকে না জানালে আমার পক্ষে তা জানা সম্ভব না। ইউএনও উম্মে তাবাসসুম স্যারের আমলে শিল্পকলার নামে বরাদ্দকৃত কোন অর্থের বিষয়ে আমাকে অবগত করা হয়নি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি বরাদ্দ হওয়া বিশেষ বরাদ্দের এক লাখ টাকা এবং নিয়মিত বাৎসরিক বরাদ্দকৃত পঞ্চাশ হাজার টাকাসহ কোনো টাকার বিষয়েই আমি অবগত নই।

এমন কি সোনালী ব্যাংক টিটিডিসি শাখায় চালু থাকা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ তহবিল হিসাবেও এখন পর্যন্ত কোনো টাকা জমা হয়নি। অথচ বিগত বছরগুলোয় নিয়মিত বাৎসরিক বরাদ্দকৃত পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই তহবিল হিসাবে জমা হতো।

এছাড়া ইউএনও স্যার শিল্পকলার উন্নয়নে কি কি উপকরণ খুবই প্রয়োজন, শিল্পকলা একাডেমির টিনের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে এমন নানা সমস্যার কথা জানার পরেও স্যারের দায়িত্বকালীন শিল্পকলার উন্নয়নে এখন পর্যন্ত কোন কাজ করা হয়নি।

সোনালী ব্যাংক টিটিডিসি শাখার ম্যানেজার মো. মামুনুর রশিদ তালুকদার বলেন, আমার শাখায় থাকা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ তহবিল হিসাব নম্বরে দীর্ঘদিন যাবত কোন অর্থ জমা পড়েনি।

সদ্য বদলি হওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি উম্মে তাবাসসুম মুঠোফোনে জানান, নিয়মানুসারে শিল্পকলার নামে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করা হয়েছে। আর অবশিষ্ট অর্থ জমা আছে। শিল্পকলার সঙ্গে জড়িত কোন ব্যক্তিকে ভাতা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই বলে আমি ওই দুইজনের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছি। শিল্পকলা একাডেমির টাকা কোন ব্যাংকের হিসাব শাখায় জমা আছে সেই বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান শিল্পকলার তহবিলে জমা আছে।

জেলা কালচারাল কর্মকর্তা মো. তাইফুর রহমান মুঠোফোনে জানান ভালো ফলাফলের জন্য জেলার রাণীনগর ও নিয়ামতপুর এই দুই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির অবকাঠামোগত উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দের কথা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে জানানো হয়েছিলো।

আমার জানা মতে তারই প্রেক্ষিতে দুই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে যা একাডেমির কমিটির পরামর্শক্রমে অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় করার কথা। তবে রাণীনগরের অনিয়মের বিষয়টি আমিও লোকমুখে শুনেছি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ