বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
এবার দলের বিদ্রোহীদের কাছে টেনে নিলেন মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সোমবার রাতভর তিনি বিদ্রোহীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দু’পক্ষই ৫ জানুয়ারি কেন্দ্র ঘোষিত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ গোপন বৈঠকের ফলে উভয়পক্ষই নিজেদের আপাতত জয়ী ভাবছে। তবে এনিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না কেউই। তবে এ ঘটনায় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু বেকায়দায় পড়েছেন বলে দলের একটি অংশ দাবি করেছে। সমঝোতা অনুযায়ী আগামি ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিদ্রোহী গ্রুপ কোন কর্মসূচি গ্রহণ করবে না।
নামপ্রকাশের না শর্তে মহানগর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আবু বাক্কার কিনুর কার্যালয়ে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন,‘রাজশাহী বিএনপি রক্ষা কমিটির’আহ্বায়ক নজরুল হুদা। পরে মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সেখানে যান। এরপর পরই মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন হাজির হন। বৈঠকের শুরুতেই বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান শরীফ ও রবিউল আলম মিলু নবঘোষিত কমিটি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এসময় তারা বলেন, মিজানুর রহমান মিনু ছাড়া রাজশাহীতে বিএনপির কোনো কমিটিই চলবে না। তারা বুলবুল-মিলন কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি তোলেন। তবে বুলবুল এসময় তাদের কথার প্রতিবাদ না করে চুপ ছিলেন। পরে তিনি বলেন, রাজশাহীতে বিএনপির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই দলের চেয়ারপারসন এই কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। রাজশাহী মহানগরের কোনো নেতার কথায় কমিটি হয় নি। কাজেই এনিয়ে কারো কোনো অভিযোগ থাকতে পারে না। মিলনও একই কথা বলেন। এসময় তারা নবঘোষিত কমিটির এক নম্বর যুগ্মসম্পাদক মামুনুর রশিদকে বাদ দেয়ার দাবি তোলেন। কিন্তু এতেই আপত্তি জানান বুলবুল-মিলন। দীর্ঘ এই বৈঠকে উভয়পক্ষই নিজের অবস্থান তুলে ধরে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে বৈঠক। বৈঠকের পরই সকালে ঢাকা চলে যান বুলবুল।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মহানগর বিএনপির আগের কমিটির দফতর সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন সাংবাদিকদের ফোন করে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের কথা জানান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ঠিক কয়েক মিনিট আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান। সংবাদ সম্মেলন বাতিলের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আমরা মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটি পুনর্বিন্যাসের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা কর্মসূচি থেকে সরে এসেছি।
ওই বৈঠকে উপস্থিত বিএনপি নেতা ডিকেন আরো জানান, মহানগরীর সকল থানা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা মিনু ভাইকে মর্যাদাপূর্ণ পদ দেয়ার দাবি করেছেন। মিনু ঢাকা থেকে ফিরলে ১০ জানুয়ারির পর এবিষয়ে সুরাহা হবে। ১০ তারিখের আগে বিদ্রোহী গ্রুপ কোন কর্মসূচি নেবে না। তবে মহানগর বিএনপির মিনুপন্থী একটি অংশের দাবি, বুলবুল ও মিলনের সঙ্গে নজরুল হুদা এবং রবিউল আলম মিলু বৈঠক করে মিনুর অবস্থান দুর্বল করে ফেলেছেন। এর ফলে মিনু বেকায়দায় পড়েছেন।
মহানগর বিএনপির আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল আমিন আজব বলেন, ‘মিনু ভাই রাজশাহীতে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অথচ তাকেই কমিটিতে রাখা হয় নি। এই কমিটি আমরা মেনে নিতে পারছি না’। তিনি সভাপতি পদে মিনুকে বসিয়ে কমিটি পুনর্বিন্যাসেরও দাবি জানিয়েছেন।
তবে বৈঠকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তিনি বলেছেন, ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিসহ দলীয় বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তীতে কী হবে, তা সময় হলেই জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, সাত বছর পর গত ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে মহানগর বিএনপি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে ঠাঁই হয়নি আগের কমিটির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর। এ কারণে নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে মিনুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতাকর্মীরা কয়েকদিন ধরে লাগাতার কর্মসূচি পালন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার বুলবুল-মিলন কমিটি বাতিলের দাবিতে ‘রাজশাহী বিএনপি রক্ষা কমিটি’ গঠনও করেন তারা। এর আগে তারা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।