শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সকলকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে
মায়ের সামনেই বাবাকে হত্যা। নেশার টাকা না দেয়ায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছেলে। মাদকাসক্তি কত ভয়ঙ্করি হতে পারে- এ তারই একটি নমুনা। এটা মোটেও দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা নয়Ñ মাদকাসক্তের দ্বারা মারাত্মক সব ঘটনা আছে ভুরি ভুরি। সন্দেহ নেই, মাদকাসক্তি একটি অন্যতম জাতীয় সমস্যা।
সংবাদ মাধ্যমের তথ্যমতে, মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সকালে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বেতুয়া পলিশা উত্তরপাড়া গ্রামে নেশার টাকা না দেয়ায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ অভিযুক্ত ছেলে হেলাল মিয়াকে (২৬) গ্রেফতার করেছে। নিহতের স্ত্রী ভূঞাপুর থানায় ছেলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মাদকাসক্তি পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সামাজিক অবক্ষয়সহ প্রায় মারাত্মক সব অপরাধের পেছনে অন্যতম প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে মাদক। সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, দেশে প্রায় কোটি মানুষ মাদকাসক্ত, যাদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ তরুণ-কিশোর। মাদকাসক্তির কারণ হিসেবে মূলত ধুমপানকেই দায়ি করা হচ্ছে। ধূমপান হচ্ছে মাদকের আঁতুরঘর। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ শতাংশ ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। যারা মাদকদ্রব্য সেবন করে তারা প্রথমে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়, তারপর অন্যান্যে মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্থ হয়ে উঠে।
পরবর্তীকালে তারা গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, সিসা, হেরোইন, কোকেনসহ নানা মরণ নেশায় আসক্ত হয়। বর্তমানে কিশোর-তরুণদের অনেকে বন্ধুদের প্ররোচনায় ধূমপান শুরু করে এবং ক্রমান্বয়ে এর একটি বিরাট অংশ মাদক সেবন ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
কিশোর-তরুণদের মধ্যে এহেন বাজে অবস্থাকে আরও উসকে দিচ্ছে বহু-ব্রান্ডের সিগারেট কোম্পানিগুলো।
আশঙ্কার কথা হলো- সিগারেট কোম্পানিগুলোর মিথ্যা প্রচারণা ও প্রলুব্ধকরণ কার্যক্রমে আশঙ্কাজনক হারে দেশে বাড়ছে ই-সিগারেট, ভেপ ও হিটেট টোব্যাকো প্রোডাক্টসমূহের ব্যবহার। সাধারণ সিগারেটের তুলনায় কম ক্ষতিকর ও সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেটকে সামনে আনছে তারা। অথচ সাধারণ সিগারেটের চাইতে ই-সিগারেট ১০ গুণ বেশি ক্ষতিকর।
মাদক ও তামাকবিরোধী আইন আছে, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশ থেকে তামাক নির্মূল করতে ঘোষণা দিয়েছেন। মাদকের বিরুদ্ধেও তিনি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন। এসব পদক্ষেপ হলো- উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করার যে রসদ সেটাকে সমুন্নত রাখা। অর্থাৎ তরুণদের সুরক্ষিত রাখা, যেদিকে তিনি সদাতৎপর। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন করতে হলে মাদকাসক্তি প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য দায়িত্ব সকলকেই নিতে হবে। নতুবা যে কারো গৃহেই মাদকাসক্তি কড়া নড়ে উঠতে পারে।