সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাংবাদিকদের ওপর হামলা মামলার আসামিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় ‘জামাই আদরে’ রাখার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, গতকাল শনিবার সকালে তাকে পুলিশের নিজস্ব গাড়িতে না নিয়ে ভাড়া করা একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদুল বালি (৩৫) নামে ওই আসামি গোদাগাড়ী থানারই তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাকে এমন ‘জামাই আদর’ করায় গণমাধ্যমকর্মীসহ স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশের প্রধান প্রতিবেদক তানজিমুল হক ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সাহেব-বাজার২৪.কমের নিজস্ব প্রতিবেদক রিমন রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে মোটরসাইকেলযোগে রাজশাহীতে ফিরছিলেন। এসময় গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ নামক স্থানে মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল কয়েকজন সহযোগীসহ একদফা তাদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে। পরে শহিদুল, তার ভাই তোফায়েল, ভগ্নিপতি সাজ্জাদ, মাদক ব্যবসায়ী তুহিন ও রানাসহ আরও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। মাদক ব্যবসায়ীরা তানজিমের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। রিমনের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয় একটি ক্যামেরা ও ১৫ হাজার টাকা।
একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা রিমনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় আশপাশের ব্যবসায়ী ও পুলিশ এসে মাদক ব্যবসায়ীদের কবল থেকে দুই সাংবাদিককে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক তানজিম বাদী হয়ে গোদাগাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় শুক্রবার রাতেই পুলিশ শহিদুলকে গ্রেফতার করে।
কিন্তু ওই রাতে তাকে থানা হাজতে রাখা হয়নি। বিধি ভেঙে তাকে থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষের পাশের একটি গেস্ট রুমে রাখা হয়। এসময় তার হাতে হাতকড়া ছিল না। গেস্ট রুমের সোফায় বসে, শুয়ে আয়েশ করে রাত কাটান মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল। মোবাইল ফোনে কথা বলেন দিব্যি। আর তাকে ছাড়িয়ে নিতে রাতভর থানায় তদবির চালান শহিদুলের চাচা পিয়ারুল ইসলাম। তবে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নজরদারিতে এবং থানায় মামলা রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় তাকে ছাড়তে পারেনি থানা পুলিশ। পরে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার পর আবারো নিয়ম ভেঙে তাকে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো-চ ১১-০৮৫১) করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
মাইক্রোবাসে গোদাগাড়ী থানার কন্সটেবল মানিক, আবদুল আলীম ও আমীর ছিলেন। এছাড়া শহিদুলের শ্যালক রাসেল ও শাহজাহান আলী নামে অপর এক ব্যক্তিসহ আরও কয়েকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন ওই মাইক্রোবাসে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা মামলার আসামিকে নিকটাত্মীয়দের বেষ্টনির মধ্যে দিয়ে আদালতে তোলায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে রাজশাহীর সাংবাদিকদের মধ্যে।
আহত সাংবাদিক তানজিম জানান, দিন কয়েক আগে মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল ও তার সহযোগীরা এলাকার অষ্টম শ্রেণি পড়–য়া মেয়েকে তুলে এনে জোরপূর্বক আরেক মাদক ব্যবসায়ী তুহিনের সঙ্গে বিয়ে দেন। এ ঘটনায় মেয়েটির মা মাদক ব্যবসায়ী শহিদুলসহ অন্যদের ব্যাপারে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
নাবালিকা মেয়েকে তুলে এনে বিয়ে দেয়ার অভিযোগটি নির্বাহী অফিসার থানার ওসিকে মামলা আকারে রেকর্ডের নির্দেশ দেন। এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর হলে মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি তার ফেইসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে দুদিন আগে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এরই মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় গোদাগাড়ীতে দুই সাংবাদিককে পেয়ে তাদের ওপর হামলা করেন।
গোদাগাড়ী থানার সাবেক ওসি এসএম আবু ফরহাদ জানান, শহিদুল বালি একজন হেরোইন ব্যবসায়ী। তিনি থানার ৩১ নম্বর তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাকে একাধিকবার ধরার চেষ্টা করেও ধরা যায়নি। বিভিন্ন জনকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে শহিদুলের বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের অনেকগুলি ভিডিও রয়েছে। মাদক ব্যবসা করে একটা দোতলা বাড়িও শহিদুল বানিয়েছে বলে জানান তিনি। এমন একজন আসামিকে থানায় ‘জামাই আদরে’ রাখা এবং মাইক্রোবাসে করে আদালতে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর থানার বর্তমান ওসি হিপজুর আলম মুন্সি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক জানান, হামলার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)। গতকাল দুপুরে আরইউজের সভাপতি কাজী শাহেদ ও সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশীদ এক যুক্ত বিবৃতিতে এ দাবি জানান।
গোদাগাড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি একে তোতা ও সাধারণ সম্পাদক জামিল আহমেদও এক বিবৃতিতে দোষিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
অপরদিকে চারঘাট উপজেলা প্রেসক্লাব রাজশাহীতে কর্মরত দুই সাংবাদিকের ওপর মাদক ব্যবসায়ীর হামলার ঘটনায় জরুরি সভা ডেকে বিচারের দাবি করেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাংবাদিকরা হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এতে সভাপতিত্ব করেন, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হক, সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক-২ আব্দুল হান্নান আকাশ, দপ্তর সম্পাদক বাবর আলী, সদস্য আবু হানিফ, আসাদুল ইসলাম মিলন, সুমন হাসান প্রমুখ।