শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
আগের শিক্ষাক্রমে ফেরার অংশ হিসেবে মাধ্যমিকে আবার বিভাগ বিভাজন চালু করতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর; যা ২০২৫ সাল থেকে চালু হবে।
নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুযায়ী নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় বিভাগ রাখতে বুধবার শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের চিঠি দিয়েছে।
অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমানে চালু শিক্ষাক্রম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। এর অংশ হিসেবে গত ২ অক্টোবর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে নবম ও দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন পুনরায় চালু করতে চিঠি দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাক্রমে সংস্কার আনার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ) তুলে দিয়েছিল। সে অনুযায়ী বর্তমানে নবম শ্রেণিতে কোনো বিভাগ বিজাজন নেই।
তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে তারা যখন দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবেন, তখন তাদের এসএসসি ও সমমানের পুরনো শিক্ষাক্রম (শিক্ষাক্রম ২০১২) অনুসরণ করতে হবে। এসব শিক্ষার্থীর বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা বিভাজন বেছে নিতে হবে।
এজন্য দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি করা হবে, যাতে তারা এক শিক্ষাবর্ষেই শিখন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে বলে নতুন নির্দেশনায় বলেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এদিন এনসিটিবির এ নির্দেশনা যুক্ত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এনসিটিবি বলেছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা মাধ্যমের নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের মত শাখা বিভাজন, শাখাভিত্তিক বিষয়, নম্বর বিভাজন, মানবণ্টন, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হবে। পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে ২০২৭ সালের মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
আগের আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি সামনে রেখে তথ্যপ্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার প্রসারে ২০১২ সালে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছিল। সেসময় সৃজনশীল পদ্ধতি, পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছিল।
এরপর পরীক্ষা ও মুখস্ত নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়।
ওই বছর দেশের সব প্রাথমিক স্কুলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয় নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর চলতি বছর তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম এবং নবম শ্রেণি যুক্ত হবে নতুন শিক্ষাক্রমের তালিকায়।
নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়া, নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক বিভাজন তুলে দেওয়াসহ একগুচ্ছ পরিবর্তন আনা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, পরীক্ষা ও মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শেখার মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ প্রক্রিয়াকে আনন্দময় করেছে।
তবে পরীক্ষা কমানো, বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া, মূল্যায়ন পদ্ধতিসহ শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেকে সমালোচনাও করেন। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়।
এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্র্বতীকালীন সরকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী রাষ্ট্র ব্যবস্থার সকল পর্যায়ে সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে।
সরকার পতনের পর ‘সংস্কারের হাওয়ায়’ বহুল আলোচিত নতুন শিক্ষাক্রম গুটিয়ে নিয়ে পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার বার্তাও দেন অন্তর্র্বতী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৈরি করা শিক্ষাক্রম ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’।
“আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব। কিন্তু এমনভাবে যাব যেন কোনো শিক্ষার্থীর পড়ালেখায় কোনো অস্বস্তি না হয়। এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কীভাবে আমরা আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব সেটা পর্যালোচনা হচ্ছে।”
এ নিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের সম্মতির পর জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এ ফিরে যাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছিল এনসিটিবি।
পরে গত ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এক পরিপত্রে চলমান শিক্ষাক্রম থেকে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, নানা সমস্যার কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’।
এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বাঁধা হিসেবে শিক্ষকদের প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবের কথা বলা হয় সেখানে।
অন্তর্র্বতী সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, পাঠ্যক্রম সংশোধন ও পরিমার্জন করে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং আগামী বছর থেকে পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আসবে।
সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার মাউশি এক চিঠিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিল।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ