নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহের কারণে দু’দিন স্কুল বন্ধ থাকার পর খুলেছে সব স্কুল। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকেই আগের নিয়মে স্কুলগুলো খুলছে। তবে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৬টায় ছিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে দু’দিন স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছিল শিক্ষা দফতর। ওইদিন রাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর একই সাথে এই ঘোষণা দেয়।
রাজশাহী জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। রোববার ও সোমবার (২১ ও ২২ জানুয়ারি) রাজশাহী জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হলো।
প্রাথমিক স্কুল চালু করে আবার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা অফিস। মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা আবহাওয়ার খবর পেয়ে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটার পরামর্শ দিয়েছেন আমাদের উপপরিচালক। তিনি অফিসে এসে স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেন।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও স্কুলের সময় হয়নি। আমরা ১০টা থেকে ক্লাস শুরু করবো বলে জানিয়েছিলাম। যদি কেউ আসে তাহলে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. সানাউল্লাহকে বেশ কয়েকবার কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
স্কুল খোলার ঘোষণার পর শিশুদের সকাল থেকে যেতে দেখা যায়। নগরীর টিকাপাড়া এলাকায় অবস্থিত মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণির শিশুদের ছুটি বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কী কারণে ছুটি তা বলা হচ্ছে না।
রেলওয়ে স্টেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অ্যাসেম্বলি শুরু হয়েছে। তখনও বন্ধের ঘোষণা জানে না সেখানকার শিক্ষকরা। এক শিক্ষক বলেন, স্কুল বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে কি না জানা নেই। আমরা কোনো বার্তা পাইনি। অ্যাসেম্বলি হয়ে গেছে তাই ছুটি দেওয়ার সুযোগ নেই।
সপুরা অন্নদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গিয়ে দেখা যায় সেখানে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। এই শিক্ষকরা বলেন, আমরা বন্ধের কোনো ঘোষণা পাইনি।
একই অবস্থা অন্য সব প্রাথমিক স্কুলগুলোতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ক্লাস শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট আগে স্কুল ছুটির বার্তা পেয়েছি। শিশুরাও স্কুলে চলে এসেছে। এখন বুঝিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। আকাশেও রোদ আছে। দুটি ক্লাস করিয়ে তাদের ছুটি দেয়া যেত।
তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে অভিভাবকদের মাঝে। শেখ রাসেল মডেল স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফারজানা রহমান বলেন, বাচ্চাতে স্কুলে পাঠাতে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে। তাকে রেডি করিয়ে দেওয়া, নাস্তা খাওয়ানো, আবার নিয়ে আসা। হুট করে বন্ধের ঘোষণা দিলেই তো আর হয়ে গেল না। অন্তত একদিন আগে জানানো দরকার ছিল।
মুন্নজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্বপ্না রাণী বলেন, বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে আসার পর শুনছি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। এটা আমাদের সাথে রসিকতা না ছাড়া কিছুই না।
জেলা শিক্ষা অফিসার মোহা. নাসির উদ্দিন বলেন, সোমবার তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার স্কুল খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে তাই আর বন্ধ করা হয়নি। উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বেশি চাপ দিতে নিষেধ আছে। তাদের রোদে পাঠাতে বলা হয়েছিল। স্কুল বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মাউশি। তবে এখন আর বন্ধ করা হচ্ছে না। আবহওয়া আরও খারাপ হলে তখন আমরা ভেবে দেখবো।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, হুট করে বন্ধ করে দেওয়াতে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বুধবার থেকে স্কুল খোলা থাকবে। সকাল ১০টা থেকে ক্লাস শুরু হবে। শেষ হবে বিকেল চারটায়।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, আগামী কয়েকদিন মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এসময় দিনের তাপমাত্রা বাড়বে ও রাতের তাপমাত্রা কমবে। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ছয়টায় রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ।