নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাত-ভোর কখনো ঝিরঝির, কখনোও গুঁড়িগুঁড়ি, কখনও মাঝারি এবং কখনও ভারী বর্ষণ চলছে বিরতি দিয়ে দিয়ে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে বরেন্দ্রজুড়ে। মধ্য শ্রাবণে যেন স্বরূপে ফিরেছে বর্ষা। যে কারণে এরই মধ্যে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে রাজশাহীর নিম্নাঞ্চল। বেশ কিছু দিন থেকে রাজশাহীতে তীব্র রোদ ও ভ্যাপসা গরম পড়ছিল। মৌসুমি বর্ষণে গরমের সে দাপটও কমেছে। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। স্বস্তি ফিরেছে আমন আবাদেও।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টিতে স্বস্তি পেয়েছেন আমন চাষিরা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে পানি না কিনেই আকাশের পানিতে জমি সেচের কাজ করতে পারছেন তারা। ফলে চাষিদের উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি পরিমাণমতো পানি পাওয়ায় খুশি চাষীরা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠে অনেক কৃষকের জমিতে হাঁটুসমান উঁচু হয়েছে ধানগাছ। এখন সেচ দিয়ে জমি থেকে আগাছা পরিষ্কারের পর একবার সার দেওয়ার পালা। অনেক কৃষককে এখনো জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে দেখা গেছে। তাদের জমিতেও দরকার সেচ। সেই সেচের চাহিদা পূরণ করে দিচ্ছে শ্রাবণের বৃষ্টি।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক মো. আব্দুস সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি চলছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৪৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন ধান চাষ হয়ে থাকে মূলত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে। গত বছর আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টির দেখা মেলে নি। এ বছর ১২ আষাঢ়ের পর থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চলে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ধানি জমির সেচ হওয়ায় গভীর নলকূপগুলোতে চাপ কমেছে।
এবার আমনের আবাদ হচ্ছে প্রায় ৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৭৫ বিঘা। আমন মৌসুম শুরুতেই সেচের পানি কিনতে হয় নি বলে বিঘায় কৃষকের সাশ্রয় হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। জমি জো ধরার পর এখন আগাছা পরিষ্কার ও সার প্রয়োগের জন্যও প্রয়োজন পানি। ফলে প্রায় ৩০ হাজার আমন চাষি স্বস্তিতে আছেন।
গোদাগাড়ির কমলাপুরের আমন চাষী শহিদুল ইসলাম বলেন, জমিতে ধানের চারা রোপন করার পর কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টি দেখা যায় নি। উচুঁ জমি হওয়ায় তিনদিন পরপর বিঘায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার করে পানি দিতে হচ্ছিলো। বৃহস্পতিবার থেকে পানি হওয়ায় একবারের সেচ খরচ বাঁচলো।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, বৃষ্টির পানিতে এবার রোপা আমনের বীজতলা হয়েছে। জমিতে চারাও লাগানো হয়েছে বৃষ্টির পানিতে। আগস্টের প্রায় ১৫ তারিখ পর্যন্ত রোপা আমনের চারা লাগানোর কাজ চলবে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমরা আশা করছি, রোপা আমন উৎপাদন ভালো হবে।
অপরদিকে, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় আমনের জমি তৈরি, চারা উত্তোলন ও চারা রোপনের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষক। কৃষকদের পাশাপাশি আমনের চারা উত্তোলন ও রোপণের কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে এ এলাকার নারী কৃষি শ্রমিকদের। এবার আমন মৌসুমের শুরুতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমনের জমিতে পানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষকরা। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গভীর-অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে চারা রোপণের কাজ করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রতি বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে সেচ বাবদ কৃষককে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। শুক্রবারের (২ আগস্ট) বৃষ্টির পানিতে স্বাচ্ছন্দে আমনের চারা রোপণের কাজ চলবে বলে জানান কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার মহাদেবপুর উপজেলায় ২৮ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আমন চাষে এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। অধিক ফলনের আশায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এবার স্থানীয় জাতের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল ধানের চারা রোপণ করছেন। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা-৫, গুটি স্বর্ণা, বিআর ১১, ব্রিধান ৩৩, ব্রিধান ৫১, ৫২ ও বিনা-৭সহ উফশীজাতের ধানের চারা।
মহাদেবপুর উপজেলার সুজাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ ও নাটশাল গ্রামের কৃষক জাহেদুল ইসলাম জানান, এবার তারা অধিকাংশ জমিতেই স্বর্ণা-৫ জাতের ধান রোপন করেছেন। বাকি জমিতে চিনিআতব ধান লাগাবেন বলে আশাব্যক্ত করেন। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন স্বর্ণা-৫ জাতের ধানে রোগবালাই কম হয় এবং উচ্চ ফলনশীল বলে এই ধান বেশি লাগিয়েছেন। পাশাপাশি চিনি আতব ধানের দাম বেশি পাওযা জায় এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পোলাও বিরানি খুব মজাদায়ক বলে চিনি আতব ধান চাষে অধিক আগ্রহ এ এলাকার কৃষকের।
এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।