রাণীনগরে এইচপিভি টিকার প্রতি আগ্রহী মেয়েরা

আপডেট: অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ১:৫২ অপরাহ্ণ


নওগাঁ প্রতিনিধি:


মেয়েদের জন্য এক মরণঘাতি ভাইরাসের নাম হচ্ছে এইচপিভি (হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস) ভাইরাস যা জরায়ুমুখ ক্যান্সার হিসেবে পরিচিত। দেশে প্রতিবছর এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার নারী মারা যাচ্ছেন।

এমন মরণঘাতি রোগ থেকে নারীদের বাঁচাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ১০ থেকে ১৪বছর বয়সী মেয়েদের বিনামূল্যে এই ক্যান্সার প্রতিরোধক টিকা প্রদানের ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। অনলাইনে নিবন্ধন করে মেয়েরা সহজেই এই টিকা গ্রহণ করতে পারছে।

গত ২৪অক্টোবর থেকে সারাদেশের সঙ্গে নওগাঁর রাণীনগরেও এই টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আনুমানিক ৬হাজার টাকা মূল্যের এই প্রতিরোধক টিকা বিনামূল্যে গ্রহণে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬শতাধিক মেয়েরা এই টিকা গ্রহণ করছে।

টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে উপজেলায় যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিক ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মশিউর রহমান মিতুল।

তিনি জানান, ছুটির দিন ব্যতিত উপজেলার স্কুলগুলোয় ২৪অক্টোবর থেকে ৭নভেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের ভিত্তিতে ৫ম-৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১০-১৪বছরের মেয়েদের স্কুলে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। আর ৮নভেম্বর থেকে ২০নভেম্বর পর্যন্ত স্কুলের বাহিরে ঝড়েপড়া ও ছিন্নমূল এবং অন্যান্য শ্রেণিপেশার মেয়েরা নিবন্ধনের মাধ্যমে সাব-ব্লকগুলো থেকে টিকা গ্রহণ করতে পারবে।

উপজেলার স্কুলগুলোয় টিকাদানের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮হাজার ৫জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫ম শ্রেণির ১হাজার ৮শত ৬৯জন আর ৬ষ্ঠ-৯ম শ্রেণির রয়েছে ৬হাজার ১শত ৩৬জন শিক্ষার্থী। সাব-ব্লকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬শত ৬৩জন।

তিনি আরো জানান, সোমবার (২৮অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে ৫হাজার ৩শত ২১জন মেয়ে আর টিকা গ্রহণ করেছে ১হাজার ১শত ৯৫জন মেয়ে। উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে ৮টি সাব-ব্লকসহ মোট ১শত ৯২টি সাব-ব্লক আর ১টি স্থায়ী কেন্দ্রের মাধ্যমে এই টিকা প্রদান করা হচ্ছে।

স্থায়ী কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এই টিকা যে কোন দিন (ছুটির দিন ব্যতিত) গ্রহণ করা যাবে। এই টিকা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষক, অভিভাবক ও টিকা প্রদানের সঙ্গে জড়িত স্বেচ্ছাসেবীদের সার্বিক সহযোগিতায় সুন্দর পরিবেশে সঠিক ভাবে টিকা প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত উপজেলায় টিকা গ্রহণ করে কোন মেয়ে অসুস্থ হয়েছে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। টিকা প্রদানে উপজেলার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রাণীনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত জানান, সে জেনেছে প্রতি বছর এই মরণঘাতি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে নারীদের মৃত্য হচ্ছে। তাই এমন রোগ থেকে বাঁচতে হলে এই টিকা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। নিজেকে বাঁচাতেই সে এই টিকা গ্রহণ করেছে এবং অন্য সহপাঠিদেরও টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে। অনেক ব্যয়বহুল এই টিকা বিনামূল্যে প্রদান করায় সে সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন (অংকুর) বলেন, সরকারের এমন উদ্যোগ নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। সরকারের এমন উদ্যোগকে শতভাগ সফল করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

জরায়ু মুখ ক্যান্সার মুক্ত দেশ গড়তে এমন টিকা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। টিকা পাবার যোগ্য সকলকে এই টিকা গ্রহণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। টিকা গ্রহণে কোথাও কোন প্রকারের সমস্যা হলে কিংবা কেউ কোন কারণে টিকা গ্রহণে ব্যর্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে টিকা প্রদানকারী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও তিনি অনুরোধ জানান। সবার সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলায় টিকা প্রদানের ক্যাম্পেইন সফল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ