রাণীনগরে স্কুলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ: মারপিটে চার শিক্ষার্থী আহত, কক্ষে তালা

আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২৪, ৭:৪০ অপরাহ্ণ

নওগাঁ প্রতিনিধি


নওগাঁর রাণীনগরে প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের নামে স্কুলে অনুপ্রবেশকারীদের মারপিটে চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) উপজেলার গোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনার সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন প্রধান শিক্ষক।



বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকলেছুর রহমান জানান, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে স্কুলের সহকারি শিক্ষক ও স্থানীয় বিএনপি নেতা ইলিয়াস হোসেন মিঠু এবং গোনা গ্রামের বাসিন্দা ও রাণীনগর মহিলা কলেজের নৈশ্যপ্রহরী শহিদুল ইসলাম সুইটের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে অনুষ্ঠিত কর্র্মসূচির প্রথম দিকে তেমন অংশগ্রহণকারী না থাকায় কিছু বহিরাগত লোকজন পাঠদান চলাকালীন সময়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই স্কুলে প্রবেশ করে। এসময় বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার কথা বললে শিক্ষার্থীরা যেতে না চাইলে বহিরাগতদের মারপিটে চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে বহিরাগতরা প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দেয়। পরে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

তিনি আরো বলেন, এমন কর্মকান্ডে বিদ্যালয়ে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরম ভাবে নষ্ট হয়েছে। যে কেউ কারো বিরুদ্ধে যে কোন ধরণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারেন কিন্তু কর্মসূচির নামে একটি বিদ্যালয়ে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ মেনে নেওয়া যায় না। আমি এমন নৈরাজ্যের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বুধবার কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছি। আমি আশাবাদি দ্রুতই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মারপিটে আহত বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাহিদুল ইসলাম জানান মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে বাহির থেকে তাদেরকে অংশগ্রহণ করার জন্য মিঠু স্যার ডাকছেন বলে বহিরাগতরা ডাক দেয়। শিক্ষার্থীরা যেতে না চাইলে ৫থেকে ৬জন বহিরাগত যুবক স্কুলে প্রবেশ করে প্রতিবাদকারী ওই শিক্ষার্থীদের মারপিট শুরু করে। মারপিটে নবম শ্রেণির চারজন শিক্ষার্থী গুরুত্বর আহত হলে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসা গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার রাতে আহত শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যায়।
নেতৃত্বদানকারী ও আন্দোলনকারী সহকারি শিক্ষক মো: ইলিয়াস হোসেন মিঠু মোবাইল ফোনে জানান তারা তাদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ শান্তিপূর্ন ভাবেই করেছেন। কিন্তু কারা স্কুলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের মারপিট করেছে এবং কক্ষে তালা দিয়েছে সেই বিষয়টি তার জানা নেই।

থানার ওসি তারিকুল ইসলাম জানান, এমন ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে পরিবেশ শান্ত করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের মারপিট করা এবং কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়া কাজটি মোটেও ঠিক হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন একটি বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে স্কুলে বহিরাগতরা প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের মারপিট করে আহত করবে এটা অত্যন্ত নাক্কারজনক একটি কাজ। আয়োজকরা তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ভাবে পালন করতে গিয়ে স্কুলের কেউ বাধা দিলে সেক্ষেত্রে বিষয়টি অন্য দিকে যেতো। কিন্তু এভাবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই হুট করে একটি বিদ্যালয়ে বহিরাগতরা প্রবেশ করে হট্টগোলের সৃষ্টি করবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি এমন অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ওই বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি তবে স্কুলে বহিরাগতরা অনুপ্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের মারপিট এবং কক্ষে তালা লাগিয়েছে এমন বিষয় জানা নেই। এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।