রাবিতে ছাত্রের লাশ মৃত্যুরহস্য দ্রুত উদঘাটিত হোক

আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০১৬, ১১:৫৪ অপরাহ্ণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালিব হোসেন লিপু হত্যায় এখন পর্যন্ত কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক চার জনের মধ্যে লিপুর রুমমেট ছাড়া বাকিদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ ও হল থেকে সংগ্রহকৃত আলামত বিশ্লেষণ করেও কোনো কুল-কিনারা করতে পারছে না পুলিশ।
দৈনিক সোনার দেশ শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানান হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ভেতরে ড্রেন থেকে লিপুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশের ধারণা, লিপুকে হত্যা করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে রামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক ডা. এনামুল হকের দেয়া তথ্যমতে নিহতের মাথার ডান পাশে বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন আছে। যার কারণে তার মৃত্যু হয়। আর বুকের দু’পাশে দুটো হাড় ভেঙ্গে গেছে। শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
ময়নাতকদন্তকারী ডাক্তারের দেয়া তথ্যই ইঙ্গিত দেয় যে, লিপুকে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন জনের বক্তব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, হত্যাকারী লিপুর পূর্ব পরিচিত। তাকে রুম থেকে ডেকে নিয়েই হত্যা করা হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, লিপু সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমে যা জানা গেছে, তাতে হত্যা হতে পারে এমন কোনো দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কারো জানা নেই। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এবং ক্যাপম্পাসে তাকে  সবাই  হাসি-খুশি ও মিশুক বলেই জানেন। তা হলে দ্বন্দ্বের সূত্রটা কীÑ যা হত্যা পর্যন্ত গড়াতে পারে? নিশ্চয় এটি পুলিশের কাজÑ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আড়ালের খুনি বেরিয়ে আসবে।
লিপুর হত্যা নিয়ে হঠাৎ করেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়লো। পুজা ও মহররমের ছুটির পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রারম্ভেই মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটলো। মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে হত্যার মত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এর মেধ্যও কোনো রহস্য আছে কি না সেটাও বিবেচনায় নেয়া দরকার। নেপথ্যের কোনো অশুভ শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিরতার মধ্যে রেখে কোনো ধরনের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে কি? লিপুর হত্যাকা-কে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- শিক্ষকদের মধ্যেই ক্ষোভ  তৈরি হয়েছে। উদ্বেগ- উৎকণ্ঠাও ছড়িয়েছে। এই মর্মান্তিক হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
লিপু দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা ট্রাকচালক হলেও সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলতে তার প্রাণান্তক প্রচেষ্টার কথা আমরা জেনেছি সংবাদ মাধ্যমে। লিপুকে কেন্দ্র করে পরিবারের স্বপ্ন- সাধ ও প্রত্যাশা জমাট বেধেছিল- কিন্তু সবকিছুই লিপুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ম্লান হয়ে গেল। এ বেদনার গভীরতা লিপুর পরিবার ছাড়া আর কেইবা বুঝতে পারবে!
লিপুর মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের দিকেই লিপুর পরিবার চেয়ে থাকবেÑ তারাও তাদের সন্তানের হত্যার বিচার চায়, হত্যাকারী সাজা হবে অন্তত এটুকুতে আশ্বস্ত হতে চায়। আমাদেরও প্রত্যাশা লিপুর খুনিদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ