সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের উপস্থিতিতে সভায় কাউন্সিলর ও কর্মচারীদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই নারী কাউন্সিলরসহ উভয়পক্ষের ৬ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে নগর ভবনের নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে।
অস্থায়ী কর্মচারীদের চলমান ১১ দফা আন্দোলনের জের ধরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে তিনজন মেয়রের পক্ষের এবং অন্য তিনজন কর্মচারী ইউনিয়নের। মেয়র পক্ষের আহতরা হলেন, মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মো. টুটুল, রাসিকের ২৫, ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর নুরুন্নাহার বেগম এবং ৭, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মুসলিমা বেগম বেলী।
কর্মচারী ইউনিয়নের আহতরা হলেন, সংগঠনটির উপদেষ্টা সুমন হোসেন ও জালাল উদ্দিন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম লাবু। এদের সবাইকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে মেয়র পক্ষের আহত তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
কর্মচারী ইউনিয়নের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বিকেলে মেয়র বুলবুল নগর ভবনের নিচতলায় নিজের অনুসারী কাউন্সিলর ও স্থায়ী কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন। ওই মতবিনিময় সভাতেই সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে মেয়র বুলবুল রাসিকের কর্মচারী ইউনিয়নকে বাতিল ঘোষণা করেন।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, অস্থায়ী কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে আমি স্থায়ী কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলাম। এসময় শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা হামলা চালান। এ হামলা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলেও দাবি করেন মেয়র।
তবে রাসিকের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজমীর আহমেদ মামুন বলেছেন, ওই সভায় মেয়রপন্থী একজন কাউন্সিলর আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ‘জঙ্গির’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, কর্মচারীদের এ আন্দোলন জঙ্গিদের মতো। তার এ কথারই প্রতিবাদ করেন ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম লাবু। একপর্যায়ে মেয়রের অনুসারী কয়েকজন কাউন্সিলর ও কর্মচারীরা অস্থায়ী কর্মচারীদের মারপিট শুরু করেন। এর ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
রাসিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল শেখ বলেন, আমাদের প্রধান দাবি মজুরি বৃদ্ধি। এটি আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি। এছাড়া স্থায়ী কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ, মৃত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পোষ্যদের চাকরি এবং মৃত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অবসরকালীন ভাতা প্রদান করতে হবে। স্থায়ী কর্মচারীদের বদলি, শোকজ ও বরখাস্ত বন্ধ এবং বরখাস্তকৃতদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন করে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী, কল্যাণ তহবিল বাস্তবায়নে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে। স্থায়ী কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, এসব দাবি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি মেনে নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র বুলবুল। আলটিমেটামের পর আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) মেয়র শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কিন্তু মেয়র ও তার অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক-কর্মচারেিদর ওপর হামলা চালিয়েছে। একজন অভিভাবকের এ ধরনের আচরণ নিন্দনীয়। আর তাছাড়া শ্রমিক ইউনিয়ন বাতিলের ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে মেয়র যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অযৌক্তিক। এটা তিনি বলতে পারেন না। সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে আমরা (শ্রমিক ইউনিয়ন) দ্রুত বৈঠক করবো। বৈঠকেই পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, নগরভবনের সংঘর্ষের খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে উত্তেজনা থাকায় এখনও সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা আছে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ১১ দফা দাবিতে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মাচরী ও শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন চলাকালে রাসিক’র মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও কর্মচারীরা। এর ফলে সকল দাফতরিক কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হন নগরবাসী। এমনকী বন্ধ করে দেয়া হয় শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান চিড়িয়াখানা ও রাসিক পরিবহন শাখার গ্যারেজ। এরপর শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১২ জুলাই মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। এ আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা মেয়র বুলবুলকে আলমিটোম দেন। এ আলমিটোমের প্রেক্ষিতেই গতকাল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মেয়র বুলবুল ও কাউন্সিলরা।