শোক ও শ্রদ্ধায় শহিদ জায়াকে চিরবিদায় || জানাজায় মানুষের ঢল, স্বামীর পাশে শায়িত

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭, ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



শোক ও শ্রদ্ধায় জাতীয় চারনেতার অন্যতম শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সহধর্মিনী জাহানারা জামানকে চিরবিদায় জানালেন রাজশাহীবাসী। স্বামীর কবরের পাশে শায়িত হলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজে জানাজা শেষে কাদিরগঞ্জ পারিবারিক কবরস্থানে কামারুজ্জামানের কবরের পাশে তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাজা ও দায়ন প্রক্রিয়ায় রাজশাহীসহ নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাকগঞ্জের কর্মী-সর্মথক ও শুভান্যুধায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, মরহুমার বড় ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন, রাজশাহীর সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী, সাংসদ আয়েন উদ্দিন, সাংসদ প্রকৌশলী এনামুল হক, সাংসদ আব্দুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানি মোহাম্মদ আলী সরকার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মইনুদ্দিন ম-ল, সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, সিটি করপোরেশনের সাবেক সাংসদ নাদিম মোস্তফা, বরখাস্ত মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রাসিক-এর ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম, সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র সরিফুল ইসলাম বাবু, সাবেক সাংসদ মেরাজ উদ্দিন মোল্লা, সাংসদ ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মুনির হোসেন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজাহার আলী, পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, ওয়ার্কার্স পার্টির নগর সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, নগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলীসহ পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জেলা ও নগরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
এসময় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জাহানারা জামান ছিলেন মহিয়সী নারী। মাত্র ১৫ বছর বয়সে স্ত্রী হিসেবে এসে তিনি পরিবারের হাল ধরেন। ৭৫’র নভেম্বরে আমার বাবা কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হলে ছয় সন্তান নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। কিন্তু হাল ছাড়েন নি। বুকে পাথর বেঁধে তার সন্তানদের মানুষ করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান ছিলেন অসম সাহসী নেতা। তিনি রাজশাহীকে শুধু বাংলাদেশে না, দেশের বাইরেও তুলে ধরেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদারদের ধ্বংস করতে ভারত সরকার রাজশাহীর ওপর গোলাবর্ষণ করতে চাইলেও কামারুজ্জামান রাজশাহীর নিরীহ মানুষের কথা ভেবে তা করতে দেননি। তিনি রাজশাহীর মানুষকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। আমি তার সন্তান হিসেবে গর্বিত।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমার অনেক মানুষের জানাজায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু নিজের মায়ের জানাজায় অংশগ্রহণ যে কী কষ্টের তকা উপলব্ধি করছি। ছোটবেলায় বাবা শহিদ হয়েছেন। সেসময় তার জানাজায় অংশ নিতে পারি নি। কিন্তু মায়ের জানাজায় অংশগ্রহণের কষ্ট কখনো ভুলার নই। কিন্তু আমার স্বার্থকতা এখানে যে, আপনারা দল-মত নির্বিশেষে সবাই জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন। এটাই আমার পরম পাওয়া। আমার মায়ের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
নামাজে জানাজা শেষে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। নগরীর ফায়ার ব্রিগেড মোড়, ঘোষপাড়া মোড়, বর্ণালী সিনেমা মোড় এবং সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট সামলাতে পুলিশকে হিমসিম খেতে হয়।
এর আগে বেলা ১১টায় একটি হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে মরহুমার মরদেহ রাজশাহীতে আনা হয়। মরদেহ সকাল সাড়ে ৯টায় পৌঁছার কথা থাকলে পৌঁছে বেলা ১১টায়। এই দীর্ঘ সময় রাজশাহীবাসী বিমানবন্দর, খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়ি ও কাদিরগঞ্জের বাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকেন। তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা হয়। নগরীর উপশহরস্থ বাসভবনে মরহুমার লাশ নেয়া হলে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর মরহুমাকে তার আদি বাসভবন কাদিরগঞ্জে নেয়া হলে সেখানে সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে মরহুমাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাতে ঢাকার গুলশানের নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি দুই ছেলে ও চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ শোকপ্রকাশ করেছেন। তার মৃত্যুতে নগর আওয়ামী লীগ তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ